শালিক, বুলবুলি, ফিঙেসহ নানান পাখির চেঁচামেচি। সাধারণত পাখিরা কোনো বিপদের আঁচ পেলে অনেক পাখি মিলে চেঁচামেচি শুরু করে। ছোট পাখিরা সাধারণত বড় কোনো শিকারি পাখি যেমন বাজ, ইগল, প্যাঁচা দেখলে ভয় পায় এবং সবাই মিলে তাড়িয়ে দিতে চায়। সম্প্রতি বাগেরহাটের মংলা গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল। একঝাঁক পাখির দল একটি কণ্ঠী নিমপ্যাঁচাকে দেখে চেঁচামেচি শুরু করেছে, আমগাছের ডালে বসে থাকা প্যাঁচাটিকে ঠোকর দিচ্ছে ব্রোঞ্জ ফিঙে। যেন গ্রামের সেই ঝোপ থেকে তাকে তাড়িয়ে দেবে। এসব জ্বালাতন সহ্য করেও প্যাঁচাটি উড়ে গিয়ে বসল আমগাছের অন্য ডালে। অনেকক্ষণ পর চেঁচামেচি থেমে গেল। অন্য পাখিরা উড়ে গেল।
প্যাঁচা মাঝারি আকারের নিশাচর পাখি। বাংলাদেশে ১৬ প্রজাতির প্যাঁচার বাস। গ্রামীণ বন, পাহাড়ি বন এবং শহরে প্যাঁচা বসবাস করে।
কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা বন ও ফলের বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা কিংবা জোড়ায় থাকে। দিনে গাছের পাতার আড়ালে বসে ঘুমায়। রাতে শিকার খোঁজে। খাবার তালিকায় আছে ফড়িং, টিকটিকি, গোবরে পোকা, ছোট পাখি। দিনের বেলায় ঘন পল্লব গুচ্ছময় গাছ, বাঁশবনে, গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকে, যাতে মানুষ সহজে দেখতে না পায়। দিনে প্রায় সারাক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখে, মাঝে মাঝে চোখ খোলে। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের বাঁশবনে গেলে কণ্ঠী নিমপ্যাঁচার দেখা পাওয়া যায়। সারা রাত বিরতি দিয়ে ডাকে টুউ বা নিম শব্দে।
প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল। গাছের কাণ্ডের প্রাকৃতিক ফোকরে কিংবা কাঠঠোকরা পাখির পরিত্যক্ত বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম সাদা, সংখ্যায় তিন-পাঁচটি। এটি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ বাদে চীন, কোরিয়া, সাইবেরিয়ায় দেখা যায়।
কণ্ঠী নিমপ্যাঁচা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্যাঁচা। এ প্যাঁচার কান-ঝুঁটি লম্বা। দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ সেন্টিমিটার, ওজন ১৭০ গ্রাম। পিঠের দাগ ধূসর-বাদামি। দেহের নিচের দিকের পালক পীতাভ। পিঠ ধূসর-বাদামি, তাতে সাদাটে তিলা থাকে। ঘাড়ে কালচে বাদামি লাইন এবং পীতাভ পট্টি থাকে। চোখ কমলা বা বাদামি, হলদে সাদা পদতল, পা ও নখর মাংসল-ধূসর থেকে কৃষ্ণ ও জলপাই রঙের। নিচের ঠোঁট কালো ও হলুদ মিশেল ওপরের ঠোঁট সবুজাভ, গোড়া ফিকে ও আগা কালো। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। কণ্ঠী নিমপ্যাঁচার দেখা পাওয়া মুশকিল, তবে রাতের বেলায় ডাক শুনে চেনা যায়।