‘এর থেকে আনন্দের আর কী আছে কন?’
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি এলাকা। এখানেই দুপুর ১২টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে হবে বিশাল সমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন এর প্রধান অতিথি।
এখানে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল—যে যেভাবে পারছেন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন। অনেকেই হেঁটে রংবেরঙের পোশাকে সেজেগুজে আসছেন সভাস্থলে।
এদিকে ভোর থেকে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এ কারণে জনসভাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, সড়ক ও নৌপথ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দলে দলে আসছেন সভাস্থলে। যানবাহনের চাপ থাকায় অনেকেই হেঁটে যাচ্ছেন। আশপাশের এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সভাস্থলে সাধারণ মানুষের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। মানুষের ভিড় বাড়তে থাকায় পুরো বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় যেন উৎসব শুরু হয়েছে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে এসেছেন পরিবহনশ্রমিক ইকবাল হোসেন। জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক গ্রামের ৫০ জন একটি বাস নিয়ে এখানে আইছি। রাস্তায় জ্যাম থাকায় হেঁটে সভায় যাইতাছি। একটু কষ্ট হইলেও আনন্দ লাগতাছে। এত মানুষ দেখে ভালো লাগছে। তা ছাড়া আজকের পর থিকা আমাগো এহন আর ফেরির জন্য এই ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইসা থাকার লাগব না। এর থেকে আনন্দের আর কী আছে কন?’
বাংলাবাজার ঘাটের সংযোগ সড়কে বসে কথা হলো ইজিবাইকচালক হিরণ শেখের সঙ্গে। তিনি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার মহিষদিয়া এলাকা থেকে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে আরও প্রায় ৯০ জন। সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হিরণরা দুটি বাস নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে। সকাল সকাল চলে আসার কারণ জানতে চাইলে হিরণ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আনন্দ করতে করতে আসছি। সকাল সকাল না এলে ভিড়ের মধ্যে পড়তে হতো। তা ছাড়া জনসভায় সামনের দিকে বসার জন্য আমরা আগেভাবে চলে আসছি।’
নাওডোবা এলাকায় দায়িত্বে থাকা শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল সকাল সাড়ে আটটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করেছে। আমরা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধ্যরাত থেকে মানুষ আসতে শুরু করছে। সবার মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দলে দলে মানুষ আসছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি।’