একুশের দিনে মেলার রং বদল
আগের দিনও বসন্তের রঙিন আভাস ছিল মেলায়। গতকাল বদলে গেল মেলার রং। সাদা-কালোয় শহীদদের স্মরণ করলেন নগরবাসী, তাঁদের আবেগ–শ্রদ্ধার সঙ্গে পোশাক–আশাকেও। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলায় আসা গ্রন্থানুরাগীদের পোশাকে প্রাধান্য ছিল সুতির সাদা-কালো শাড়ি, পাঞ্জাবি ও চাদর। তাতে বর্ণমালা বা ঐতিহ্যবাহী আলপনার ছাপ। উজ্জ্বল বর্ণের পোশাক দেখা গেছে অল্পই।
গতকাল মেলা শুরু হয়েছিল সকাল আটটায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেকেই চলে আসেন মেলায়। ফলে সকাল থেকেই মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উভয় অংশেই প্রচুর লোকসমাগম ঘটে। তবে মূল জনস্রোত শুরু হয় দুপুর থেকে। সরকারি ছুটির দিন ছিল। ফলে পরিবার নিয়ে নগরবাসী বইমেলার পথ ধরেন। বিকেলে, সন্ধ্যায় এত মানুষের সমাগম ঘটেছিল যে ‘উপচে পড়া ভিড়’ বা ‘জনসমুদ্র’ এমন বিশেষণ দিয়েও পরিবেশটি ঠিক বোঝানো যাবে না।
টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট দিয়ে প্রবেশ করা রীতিমতো ভোগান্তির বিষয় হয়ে উঠেছিল বিকেলের দিকে। শুক্রবারেও প্রায় একই অবস্থা হয়েছিল। গতকাল অব্যবস্থাপনা মাত্রাছাড়া হয়ে ওঠে। কেন যে রিকশা এবং গাড়িগুলো আসতে দেওয়া হচ্ছিল তা নিয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশৃঙ্খলভাবে রিকশা ও গাড়িগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল ওই এলাকায়। মূল ফটক পর্যন্ত যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে।
অনেক বিক্রি
মেলায় অনেক লোক, সে কারণে বিক্রিও হয়েছে যথেষ্ট। কারও কারও ক্ষেত্রে আশা ছাড়িয়ে গেছে। অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বললেন, ২১ ফেব্রুয়ারিতে এর আগে মেলায় এত লোকসমাগম তিনি দেখেননি। আর তাঁদের স্টলে বিক্রিও হয়েছে আগের একুশের দিনগুলোর তুলনায় বেশি। বিক্রি নিয়ে এমনই আশার কথা বললেন কথাপ্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. ইউসুফ, অনিন্দ্য প্রকাশনী নূর আহমদসহ অনেকে।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল এইচ পলাশ এবং লেখক দন্ত্যস রওশনের সঙ্গে। তাঁরা বললেন, গত বছর লোকে একুশেতে মেলা পাননি। সেটি এমন জনস্রোতের কারণ হতে পারে। তা ছাড়া ঢাকায় বিনোদনের জায়গা কম, মানুষ অনেক দিন ঘরবন্দী ছিল। তবে
আশার কথা হলো এই ডিজিটাল যুগেও ছাপা বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ সত্যি প্রশংসনীয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্তি কমাতে বই পড়ার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখতে পারে। তবে প্রকাশনার মান বাড়াতে হবে।
লেখকের কথা, কবিতা পাঠ
মেলায় লেখকেরা এসেছিলেন অনেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে বিকেলে নিজের লেখালেখি নিয়ে পাঠকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন দুই জননন্দিত কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক। ওদিকে একাডেমি প্রাঙ্গণের ভাষাশহীদ উন্মুক্ত মঞ্চ কাব্যময় করে তুলেছিলেন কবিরা। সকাল আটটা থেকেই শুরু হয়েছিল কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। প্রথম পর্বে কবি অসীম সাহার সভাপতিত্বে অর্ধশতাধিক কবি কবিতা পাঠ করেন। বিকেলে একাডেমির সচিব হাসানাত লোকমানের সভাপতিত্বে ২৫ জন বিশিষ্ট কবি কবিতা পাঠ করেন।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২২৪টি।
প্রথমা থেকে নতুন বই এসেছে আন্দালিব রাশদীর উপন্যাস প্রেম ও প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রথমার স্টলে আনিসুল হকের রক্তে আঁকা ভোর ও মহিউদ্দিন আহমদের পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তিবাহিনী জিয়া হত্যা মনজুর খুন বইগুলো ভালো চলেছে। অন্য নতুন
বইয়ের মধ্যে কথাপ্রকাশ এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোর গল্প ভুতুড়ে, অক্ষর এনেছে শামসুর রাহমানের নির্বাচিত ৩০০ কবিতা, অনন্যা এনেছে মুহাম্মদ ইব্রাহিমের বিজ্ঞানবিষয়ক মানুষ আমরা, মিজান পাবলিশার্স এনেছে রবীন্দ্র গোপের মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প, পাঞ্জেরী এনেছে সঙ্গীতা ইমামের ভ্রমণকাহিনি সুখের রাজ্যে তুলতুল, আজকাল এনেছে ডালিয়া লায়লার গল্প না-মেলানো সমীকরণ, য়ারোয়া এনেছে প্রদীপ
মিত্রের কবিতা সংগ্রামের বাঁশপাতা, রাঁচী গ্রন্থ নিকেতন এনেছে মোহাম্মদ সফিউল আজমের কাব্য স্বাগত সম্ভার।