‘আমাকে ক্ষমা করেন, শয্যা খালি নেই’
চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার মোট ১ হাজার ২৬৪ করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউতে ১০৯ জন ভর্তি রয়েছেন।
আফরোজা জাহানের (৩২) করোনা শনাক্ত হয়েছে পাঁচ দিন আগে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়। অভিভাবকেরা তাঁকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কোনো হাসপাতালে শয্যা খালি পাচ্ছেন না তাঁরা।
চট্টগ্রামের সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী এখন দিন দিন বাড়ছে। কোনো হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারিভাবে কিছু শয্যা ফাঁকা দেখানো হলেও ওই সব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা এবং নিবিড় পরিচর্যার কেন্দ্রের (আইসিইউ) মতো ব্যবস্থাগুলো নেই। ফলে হাসপাতালের শয্যার জন্য স্বজনেরা এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটছেন। আর বিফল হচ্ছেন।
নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সব মিলে ৬০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৭০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। একজন রোগী ভর্তির জন্য অনুরোধ করা হলে হাসপাতালটির মহাব্যবস্থাপক রঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘ভাই, আমাকে ক্ষমা করেন। কোনো শয্যা নেই। কোনো কেবিনে দুজন করে একই পরিবারের রোগী রয়েছেন। আইসিইউ শয্যাও খালি নেই।’
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার মোট ১ হাজার ২৬৪ করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউতে ১০৯ জন ভর্তি রয়েছেন। আইসিইউতে ১০ এবং সাধারণ শয্যা ৩০ শতাংশ ফাঁকা দাবি করা হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দৈনিক প্রতিবেদনে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র উল্টো। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৬০ রোগী ভর্তির সক্ষমতা থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেনসহ সুযোগ–সুবিধা নেই।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের ১৫০ শয্যার সব কটিতে রোগীতে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে জায়গা না হলেও অতিরিক্ত রোগী হলি ক্রিসেন্টে পাঠানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটও প্রায় ভর্তি।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগী প্রয়োজনে মেঝেতে রাখা হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আরও ১০০ বাড়িয়ে ৪০০ শয্যা করা হচ্ছে। জেনারেল হাসপাতাল এবং হলি ক্রিসেন্টেও রোগী আরও ভর্তি করানো হবে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর বিধিনিষেধের বিকল্প নেই। মানুষকে ঘরে থাকতে হবে।
বেসরকারি হাসপাতালেও কোভিড ইউনিটে শয্যা খালি নেই। নগরের মা ও শিশু হাসপাতালে ২৭টি আইসিইউ এবং এইচডিইউসহ প্রায় ২০০ করোনা রোগী রাখা হচ্ছে। এরপরও চাপ সামলানো যাচ্ছে না। হালিশহরের সত্তরোর্ধ্ব সাইফুল ইসলামের অক্সিজেন স্যাচুরেশন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কমে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চেষ্টা করেও শয্যা খালি পাওয়া যায়নি। পরে মা ও শিশু হাসপাতালে অতিরিক্ত একটি শয্যা দিয়ে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়।
মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের অধ্যাপক অলক নন্দী বলেন, ‘করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। আইসিইউ, এইচডিইউ সবকিছু ভর্তি। রোগীর চাপ যেভাবে বেড়েছে, তাতে সামনের দিনগুলো কেমন হবে বুঝতে পারছি না।’
পার্কভিউ হাসপাতালে আইসিইউসহ ৯০ জনকে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক তালুকদার জিয়াউর রহমান বলেন, অনেক অনুরোধ আসছে। কিন্তু শয্যা খালি নেই। ৯ জনের ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছি, খালি হলে আসতে বলব।
বেসরকারি আরেকটি হাসপাতাল ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ৫০টি কেবিনের প্রতিটি ভর্তি রয়েছে। এ ছাড়া আইসিইউ ও এইচডিইউর ২৯টি শয্যার একটিও খালি নেই।
হাসপাতালটির কোভিড ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ক চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘কেবল অনুরোধ আসছে। কোনো রোগীকে নামিয়ে তো আরেকজনকে দেওয়ার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন।’