আমাদের আহ্বানে লেখা পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। কোভিড-১৯ অতিমারির শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার দিনে প্রথম আলোয় প্রকাশিত কোনো খবর থেকে স্বস্তি, আনন্দ, সাহস বা প্রেরণা পেয়ে থাকলে লিখে জানাচ্ছেন সে অভিজ্ঞতার কথা। দেশ বা বিদেশ থেকে লেখা পাঠান। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]
মানুষ এখন যেন করোনায় অভ্যস্ত হয়ে এসেছে অনেকটাই। কিন্তু শুরুর দিনগুলো ছিল ভয়ংকর। সবাই আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সরকারি–বেসরকারি নানা প্রচারণায় ধীরে ধীরে বুঝতে থাকি, যত দিন করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হচ্ছে, তত দিন আমার শতভাগ ভরসা প্রতিরোধেরই ওপর। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক তখন সম্ভবত মানুষের মুখে মুখে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ হয়ে উঠেছে। বাইরে কোথাও বেরোতে গেলেই মাস্ক পরতে হবে, মুখে লাগাতে হবে মাস্ক। কেউ কেউ তো আরও বেশি। সুরক্ষাবস্ত্রে আপাদমস্তক মুড়ে পথে বেরিয়েছেন।
যাহোক, দেখতে দেখতে চলে এল মার্চ মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। চলে আসতে হলো বাসায়। বাসায় বন্দী সময়গুলো ধীরে ধীরে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে লাগল।
সকালে হকার আঙ্কেল প্রতিদিন প্রথম আলো দিয়ে যান। সেটাই সময় কাটানোর এক মস্ত অবলম্বন। কারণ, চারদিকে তখন বিচিত্র খবর। আমরা ব্যগ্র কৌতূহলে টিকার খবরের দিকে চোখ রাখছি। আর চোখে পড়ছে নানা টোটকা চিকিৎসার খবর থেকে নানা ভুয়া ভ্যাকসিন আবিষ্কারের খবর। শুনতে শুনতে কান দুটি ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিল। কোনটা বিশ্বাস করব, আর কোনটা করব না—সেটা নিয়ে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা।
এর মধ্যে ২৪ জুলাইয়ের সকালে প্রথম আলো পত্রিকাটি হাতে নিতেই প্রথম পৃষ্ঠায় মোটা কালো অক্ষরের একটা শিরোনামে চোখ আটকে গেল। শিরোনামটা ছিল এ রকম, ‘আগামী বছরের আগে টিকার প্রত্যাশা না করা ভালো: ডব্লিউএইচও’। খবরের বাকি অংশ ৪ নম্বর পৃষ্ঠার ৫ নম্বর কলামে প্রকাশ করা হয়েছিল। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিষেবার প্রধান মাইক রায়ান এভাবেই সতর্ক করেছিলেন বিশ্ববাসীকে। তিনি বলেছিলেন, আগামী বছরের শুরুর দিকেই হয়তো কোনো টিকা মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সে সতর্কবার্তা একদিকে আমার মনে তথ্যের বিভ্রান্তি দূর করেছিল, অন্য দিকে মনে ফিরে পেয়েছিলাম ভরসা।
ঠিক সেই দিনের পত্রিকায় আরও একটি ছবি আমার মনে স্বস্তির স্পর্শ বুলিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রথম আলোর ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল রাজধানীর ওয়ারী এলাকার র্যাঙ্কিন স্ট্রিটের একটি ছবি। ছবিটি তুলেছিলেন হাসান রাজা। বছর ছয়-সাতেকের একটি মেয়ে তার বাবার জামার আস্তিন ধরে হাঁটতে বেরিয়েছে। তার বাবার কোলে বছর দেড়েকের ছোট ভাই। তিনজনের মুখেই মাস্ক। বাবা মনোযোগ দিয়ে মুঠোফোনে কিছু একটা দেখছেন। আর দুই সন্তান বাবার সঙ্গে চলেছে নির্ভার হয়ে। ছবিটির পেছনে দেখা যাচ্ছে মানুষ ছুটছে। যার যার কর্মস্থলে, যার যার গন্তব্যে। কাজের গতি আর নির্ভরতার শান্তি ছবিটার মধ্যে মিশে আছে। বড় অপূর্ব!
এখন তো আমরা নিয়মিত খবর পাচ্ছি এবং বিশ্বাসও করতে শুরু করেছি, করোনাপ্রতিরোধী টিকা শিগগিরই মানুষের হাতে আসবে। কাছাকাছি সময়েই হয়তো একাধিক টিকা। মানুষ এই বিপদকে পাড়ি দেবে। কিন্তু ধন্যবাদ প্রথম আলো, মহামারির এই দুঃসময়ে মানুষের কাছে নিরন্তর সঠিক খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তাই আস্থা রাখছি প্রথম আলোয়।
এম জাহিদুল ইসলাম: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়