টিসিবির লাইনে মা–মেয়েদের যেভাবে পেলাম
১৯ মার্চ শবে বরাত। দুই সপ্তাহ পরেই পবিত্র রমজান শুরু। বাড়ছিল নিত্যপণ্যের দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বাজার অস্থির।
মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত—সব শ্রেণির মানুষ দিশাহারা। অনেকেই লজ্জা–সংকোচ ভুলে দাঁড়াচ্ছেন টিসিবির ট্রাকের পেছনে।
ভোর থেকে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা, খালি হাতে অনেকের বাড়ি ফেরা—মানুষের এমন কষ্টের কথা জানতে আমিও তখন ছুটছি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।
২১ মার্চ বেলা ১১টায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের মাঠের পেছনে টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের অপেক্ষায় কিছু নারী–পুরুষের জটলা দেখে এগিয়ে যাই। সকাল থেকে অপেক্ষায় থেকে অনেকে ক্লান্ত হয়ে ফুটপাতে ছায়ায় বসে ছিলেন।
এই ফাঁকে অপেক্ষমাণ নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা শুরু করি।
হাজারো অভিযোগ থাকলেও ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইলে অনেকে চুপ হয়ে যান, কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এ সময় সন্তান কোলে এক নারী এগিয়ে এলেন।
নাম সাবিনা ইয়াসমিন। স্বামী স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর সঙ্গে যখন কথা বলছি, সন্তান কোলে আরেক নারী এগিয়ে এলেন। নাম লিপা আক্তার, সাবিনার ছোট বোন। তাঁর স্বামী একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।
দুই বোন জানালেন, সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে গত কয়েক দিন তাঁরা অনেক এলাকায় টিসিবির ট্রাকের খোঁজ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তখন এক নারীকে মাঠের দিকে আসতে দেখে লিপা এগিয়ে গিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসেন। বললেন, তাঁর মা সুফিয়া বেগম।
শাড়ির আঁচল চাদরের মতো গায়ে জড়িয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়েছেন। হাঁটছিলেন ধীর পায়ে, বোঝা গেল কিছুটা অসুস্থ।
সুফিয়া থাকেন উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে খালি প্লটে গড়ে ওঠা বস্তিতে। উত্তরার একটি অফিসে কর্মকর্তাদের খাবার রান্নার কাজ করেন। স্বামী ডাব বিক্রির দোকানে কাজ করেন। তাঁর সংসারে এখন চার সদস্য। এক ছেলেও রোজগার করেন। তবু সংসার চলে না। সুফিয়া বলেন, আগে কখনো টিসিবি থেকে পণ্য কেনেননি।
ট্রাক আসায় কথা আর এগোল না। অন্যদের সঙ্গে মা–মেয়েরাও ট্রাকের দিকে ছুটলেন। তবে দুই বোনের কোলে শিশু, মা অসুস্থ। তাই লাইনে তাঁদের জায়গা হয় সবার পেছনে।
মা-মেয়েরা পণ্য কেনার সুযোগ পান বেলা তিনটার দিকে। টিসিবির পণ্য কিনতে এসে হঠাৎ দেখা মা–মেয়েদের। সেই সঙ্গে মিলে যায় আমার স্টোরিও।