ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে রাঙামাটি বনরূপা শহরের বই একাডেমিতে হাজির হন তাপসী পাল। এত সকালে সচরাচর কোনো হকার পত্রিকা নিতে আসেন না। প্রতিদিন সবার আগেই পাঠকদের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দেন তাপসী পাল।
নয়টার মধ্যে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়ার পর লেগে যান সংসারের কাজে। পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি সংসারে খরচ মেটাতে একসময় একটি উন্নয়ন সংস্থাতেও চাকরি করতেন তাপসী। সঙ্গে তাঁর দুই ছেলেকে খাওয়া ও স্কুলে পাঠানোর কাজও করেছেন। তবে এখন শুধু পত্রিকা বিক্রি ও সংসার সামলান তাপসী পাল। দু–এক বছর নয়, এভাবে ১৭ বছর ধরে রাঙামাটি শহরে চার এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করছেন। এখন তাঁর দুই ছেলে কলেজে পড়ছেন। তাপসী পালদের বাড়ি রাঙামাটি শহরের পশ্চিম ট্রাইবেল আদামে।
তাপসী পাল বলেন, ১৭ বছর আগে স্বামী প্রদীপ পালকে পত্রিকা বিক্রির কাজে সাহায্য করতেন তিনি। পরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে রাঙামাটি শহরের চার এলাকা ভাগ করে নেন। তার পর থেকে ওই চার এলাকায় পত্রিকা বিলি করা শুরু করেন। ওই এলাকায় দেড় শতাধিক পাঠকের কাছে পত্রিকা বিক্রি করতেন। এ সময় ওই সব এলাকায় ১২০ জনকে নিয়মিত পাঠক করে ফেলেন। তবে করোনা মহামারি আসার পর তাঁর কিছু গ্রাহক কমে যায়। এখন ৭০ জন নিয়মিত গ্রাহক ও ৩০টি পত্রিকা ভ্রাম্যমাণ বিক্রি করেন।
তাপসী পাল আরও জানান, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তাঁর ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। বড় ছেলে অনার্স ও ছোট ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। এখন একটা ইচ্ছা, যেন তাঁর দুই ছেলে যেকোনো চাকরি পান। তারপর তিনি বিশ্রাম নেবেন।
বই একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে তাদের কাছ থেকে সাতজন হকার পত্রিকা নিয়ে বিক্রি করেন। তার মধ্যে তাপসী পাল ও স্বামী প্রদীপ পাল। তাঁরা দুজনে ২০০ থেকে ২৫০টি পত্রিকা বিক্রি করেন। করোনাভাইরাসের আগে স্বামী-স্ত্রী মিলে চার শতাধিক পত্রিকা বিক্রি করতেন। মূলত তাঁদের সংসার চলে পত্রিকা বিক্রি করে। দুজনে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন। তাপসী পাল রাঙামাটি শহরের বনরূপার একাংশ, ফরেস্ট কলোনি, পূর্ব ট্রাইবেল আদাম ও পশ্চিম ট্রাইবেল আদামের পাঠকদের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দেন।
প্রদীপ পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকা বিক্রি আমি একাই শুরু করি। পরবর্তী সময়ে আমার স্ত্রী আমাকে সাহায্য করেন। একসময় তিনি চার এলাকার নিজেই দায়িত্ব নেন। এখনো সেই চার এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করে যাচ্ছেন। আমার আগে গিয়ে এজেন্টের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে আসেন। পরে আমি শহরের কালিন্দীপুর, চম্পকনগর ও বনরূপা এলাকায় বিক্রি করি।’
বই একাডেমির কর্মচারী সুলেশ চাকমা বলেন, ভোরে এসে পত্রিকা নিয়ে যান তাপসী পাল। সঙ্গে স্বামী প্রদীপ পালের পত্রিকাও নিয়ে যান। বনরূপা শহরের ফরেস্ট কলোনি ও ট্রাইবেল আদাম সড়কের আশপাশের মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন। তাঁর নিয়মিত পাঠক ও ভ্রাম্যমাণ মিলে শতাধিক পত্রিকা বিক্রি করতেন।
ট্রাইবেল আদামের পাঠক মো. নজরুল হক বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ভোরে প্রথম আলো পত্রিকা পেয়ে থাকি। তাপসী পাল নামের এক নারী আমাদের নিয়মিত পত্রিকা দিয়ে যান।’
বই একাডেমি প্রতিষ্ঠানের মালিক বাসনা দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মোট সাতজন হকার রয়েছেন। এর মধ্যে একমাত্র নারী হকার তাপসী পাল সবার আগে পত্রিকা নিয়ে যান।’