প্রতিদিনই ভালো থাকুন
কোভিড সচেতনতা, কোভিডের নানা দিক, টিকা, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ ব্যাপকভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়ক হয় পাতাট
চিকিৎসক হওয়ার আগে থেকে আমি ছিলাম প্রথম আলোর ফিচার লেখক। আজ থেকে ২৪ বছর আগে, মানে একেবারে প্রথম সংখ্যা থেকেই বিভিন্ন পাতায় বিচিত্র সব বিষয়ে লিখে চলছিলাম। এমনকি বাদ যায়নি বিজ্ঞানচিন্তা বা কিশোর আলোও। প্রথম আলোতে সবাই আমাকে ফিচার লেখক, সায়েন্স ফিকশন লেখক বা গল্পকার হিসেবে চিনত। এর মধ্যে একদিন হঠাৎ সাব্যস্ত হলো যে একটা নিয়মিত স্বাস্থ্য বিভাগ চালু করা দরকার, যেখানে দৈনন্দিন নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান, সচেতনতা, পরামর্শ ইত্যাদি দেওয়া হবে। হাতের কাছে লেখক কাম চিকিৎসক হিসেবে একজনকেই পাওয়া গেল। সেটা আমি। এ ভাবনা থেকে ‘ভালো থাকুন’ নামের বিভাগটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পেলাম।
প্রথম আলোর ভালো থাকুনের সঙ্গে আমার পথচলা এবার সাত বছরে পড়ল। এই সাত বছরে কখনো ভালো থাকুন ছিল মূল পত্রিকার পঞ্চম পাতায়, কখনো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে, কখনো আলাদা পাতা হিসেবে ফিচার বিভাগের সঙ্গে। এতে লাভ হয়েছে এই যে আমিই মনে হয় একমাত্র বিভাগীয় সম্পাদক, যে কিনা রিপোর্টিং, ফিচার, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিচিত্র সেকশনে ঘোরাফেরা করেছি। আমাদের এই ভালো থাকুন বিভাগে যেমন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান, ব্রিগেডিয়ার আবদুল মালেক ও এ কে আজাদ খান এবং অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহর মতো দেশবরেণ্য চিকিৎসকেরা লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ ও দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা চিকিৎসকেরাও। দৈনন্দিন সাধারণ বিষয় নিয়ে যেমন আমরা ছেপেছি, তেমনি ছেপেছি বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা বা ফিচারও।
প্রতিদিনের পত্রিকায় পঞ্চম পাতায় একটুখানি স্থান পাওয়া ভালো থাকুন কলামটি ক্রমে জনপ্রিয় হতে থাকলে একসময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে একটা পাতাই করা হবে স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে। এরপর প্রতি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হতে থাকে আমাদের বৃহৎ কলেবরের পূর্ণাঙ্গ প্র স্বাস্থ্য পাতা। কোভিডকালে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পাঠকের কাছে। সে সময় কোভিড সচেতনতা, কোভিডের নানা দিক, টিকা, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ ব্যাপকভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়ক হয় পাতাটি।
এরপর আমরা প্রকাশ করতে শুরু করি বছরে একবার ‘বর্ণিল ভালো থাকুন’ ম্যাগাজিনও। সেটাও প্রকাশের পরপরই বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পরে বৃহস্পতিবারের পূর্ণ পাতা ভালো থাকুন বন্ধ হয়ে গিয়ে চালু হলো অনলাইন সুস্থতা বিভাগ। প্রতিদিন নানা বিষয়ে স্বাস্থ্য পরামর্শ, প্রশ্নোত্তর ও সচেতনতামূলক ফিচার প্রকাশিত হচ্ছে এ বিভাগে। আর পঞ্চম পাতার ভালো থাকুন তো আছেই তার চাহিদা নিয়ে।
এবার ভালো থাকুন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতার কথা বলি। বিভাগটি সমন্বয় করার কারণে দেশের প্রায় সব বরেণ্য ও শ্রদ্ধেয় চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসার এবং স্নেহধন্য হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। বলতে দ্বিধা নেই, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, মেন্টর ও অগ্রজদের অনেকে এ বিভাগে লেখার জন্য আগ্রহী হয়েছেন।
ভালো থাকুনের হয়ে যাঁদের কাছে লেখা চেয়েছি, কেউ নিরাশ করেননি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিয়েছেন, লিখেছেন, অল্প সময়ের নোটিশে লেখা পাঠিয়ে দিয়েছেন। ভালো থাকুনের সুবাদে চিকিৎসকদের মধ্যে একটি লেখকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। আমরা লক্ষ করেছি যে আমাদের প্রকাশিত লেখা পরে বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে পুনর্বার মুদ্রিত হয়েছে, অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে বা পেজে বহুবার শেয়ার হয়েছে। এভাবে ভালো থাকুনের লেখাগুলো ছড়িয়ে গেছে বহু পাঠকের কাছে। ভালো থাকুনের অনেক লেখক জানিয়েছেন যে রোগীরা প্রথম আলোর পেপার কাটিং নিয়ে হাজির হয়েছেন তাঁদের কাছে, জানিয়েছেন তাঁদের ভালো লাগার কথা। এমনিতেও পরিচিত-অপরিচিত অনেক পাঠক মন্তব্য করেছেন যে কত উপকৃত হয়েছেন তাঁরা পাতাটি পড়ে। আমাদের প্রশ্নোত্তর বিভাগে মেইলে, চিঠিতে এসে এখনো জমা হয় অনেক অনেক প্রশ্ন, কত কিছু যে জানতে চান তাঁরা। পাঠকের এ ভালোবাসাই আমাদের সম্পদ। আমাদের পাথেয়। পাঠকের ভালো থাকাই আমাদের ভালো থাকা।
তানজিনা হোসেন, চিকিৎসক ও কল্পবিজ্ঞান লেখক