কর্মীর লেখা
একজন অসহায় মায়ের হাসি
প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মীদের কাছে লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁরা লিখেছেন প্রথম আলোকে নিয়েই। কর্মীদের নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়েই এ আয়োজন।
২৯ আগস্ট ২০২৪। রাত ১২টা ৩০ মিনিট। আমরা ত্রাণের মালামাল ট্রাকে উঠিয়ে রওনা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বন্যাকবলিত হকারদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ। ঠিক তখন দুর্ঘটনা ঘটল। আমাদের ড্রাইভার তাঁর দুটি মুঠোফোনই সিটে রেখে শেষবারের মতো মালামাল ঠিক আছে কি না দেখতে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে তাঁর দুটি মুঠোফোনই গায়েব হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ খুঁজেও মুঠোফোন না পেয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে রওনা হলো ফেনীর উদ্দেশে।
ঠিক ওই সময় মেয়েটির মুখে হাসি দেখে মনে হয়েছিল, মাত্রই সে বিশ্ব জয় করেছে। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পারার আনন্দ তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল।
ভোর প্রায় ৫টা ৩০ মিনিট, আমরা ফেনীতে পৌঁছালাম। ফেনীর হকাররা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যে খেয়াল করলাম, আনুমানিক ১৮ বছর বয়সী সুলতানা (ছদ্মনাম) তার ছোট্ট বাচ্চা কোলে নিয়ে সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছে। একটা প্যাকেটের জন্য সবার হাতে–পায়ে ধরছে।
তাকে যতই বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়, সে আবার ফিরে আসে একটা প্যাকেটের জন্য। বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে আছে। ফেনীর প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ি হওয়ায় ত্রাণও পাচ্ছে না, তাই সারা রাত এখানে বসে আছে বাচ্চা কোলে নিয়ে, যদি একটু সাহায্য পাওয়া যায়। টিম লিডারের সঙ্গে আলোচনা করলাম। বললেন, একটু অপেক্ষা করেন, যদি প্যাকেট থাকে, তাহলে দেওয়া যাবে। কিছু বললাম না মেয়েটিকে।
এরই মধ্যে কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। হকারদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ হতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কাজ শেষ করে দেখি, মেয়েটি বাচ্চা কোলে তখনো দাঁড়িয়ে আছে। টিম লিডারের কাছে নিয়ে গেলাম। উনি একটা প্যাকেট মেয়েটিকে দিলেন। ঠিক ওই সময় মেয়েটির মুখে হাসি দেখে মনে হয়েছিল, মাত্রই সে বিশ্ব জয় করেছে। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পারার আনন্দ তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল।
মো. শরিফুল হক, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী, সার্কুলেশন সেলস বিভাগ