সাফল্য, স্বস্তির খোঁজে ফিচারে চোখ
‘কোনো দিন আপনাকে দেখিনি, কোনো দিন কথা হয়নি। তবু মনে হয়েছে কত কাছের মানুষ। শনিবার সকাল মানেই তো “প্রিয় সিংহ” বলে আপনার ডাক। এই অভ্যাস ছেড়ে দেওয়া ভীষণ কঠিন হয়ে যাবে!’ ফেসবুকে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন প্রথম আলোর এক পাঠক। কাওসার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরে।
বরেণ্য এই গীতিকার ছিলেন ‘ছুটির দিনে’র ‘আপনার রাশি’র লেখক। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মারা গেছেন। লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাশির ঘরগুলো ফাঁকা রেখেই শেষবারের মতো ‘আপনার রাশি’ ছাপা হয়েছিল ‘ছুটির দিনে’তে। সেই শূন্য রাশিফল ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বহু পাঠক। লিখেছেন তাঁদের বেদনা, আবেগ কিংবা স্মৃতির কথা।
‘দেখা না হওয়া, কথা না হওয়া’ পাঠকেরা এমনিভাবে প্রথম আলোর ‘কাছের মানুষ’ হয়েছেন ফিচার পাতাগুলোর মধ্য দিয়ে। ‘ছুটির দিনে’, ‘স্বপ্ন নিয়ে’, ‘নকশা’, ‘নারীমঞ্চ’ কিংবা ‘অধুনা’য় চোখ রাখা হয়ে উঠেছে তাঁদের অভ্যাসের অংশ। আর এখন তো শুধু ছাপা পত্রিকায় নয়, সারা সপ্তাহেই ফিচার–সংশ্লিষ্ট লেখা পাওয়া যায় প্রথম আলো অনলাইনের ‘জীবনযাপন’ অংশে।
গত এক বছরে প্রথম আলোর আলোচিত ফিচারগুলোর দিকে নজর দিলে বোঝা যায়, অনুপ্রেরণাদায়ী কিংবা মন ভালো করা খবরের প্রতি পাঠকের আগ্রহ ছিল বেশি। করোনা মহামারির ধাক্কা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ অন্য খবরের ভিড়ে পাঠক নিশ্চয়ই একটু স্বস্তি খুঁজতে চেয়েছেন। এ ছাড়া সম্পর্ক, সাফল্য কিংবা স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখার প্রতিও পাঠকের আগ্রহ দেখা গেছে।
‘স্বপ্ন নিয়ে’র অনুপ্রেরণা বিভাগে ছাপা হয়েছিল ভারতীয় চিকিৎসক দেবী শেঠির জীবনের গল্প। মেডিকেল কলেজে প্রথম দফায় ভর্তি হতে না পারা ছাত্রটি কীভাবে উপমহাদেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান হার্ট সার্জন হলেন, সে ঘটনা অনেক পাঠককে নাড়া দিয়েছে।
শহরের রাস্তায় ব্যালে ড্যান্সারের সেই ভাইরাল ছবিটা মনে পড়ে? ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতাতেই ছাপা হয়েছিল ছবির পেছনের গল্প। কীভাবে ক্যামেরা হাতে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি সঞ্চয় করেছেন আলোকচিত্রী জয়িতা তৃষা, খবরটি পড়ে প্রথম আলোর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন বেশ কয়েকজন পাঠক। তাঁদের মধ্যে একজন বলছিলেন, ‘আমার মা-ও ক্যানসার রোগী। আমি কি জয়িতা আপুর নম্বরটা পেতে পারি? তাঁর সঙ্গে কথা বললে মা সাহস পাবেন।’ জয়িতার অনুমতি নিয়ে এই পাঠককে আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলাম।
‘নকশা’র অনুরোধে ইলিশের নানা পদ রেঁধেছিলেন অভিনেতা ইয়াশ রোহান ও তাঁর মা অভিনেত্রী শিল্পী সরকার অপু। লেখা-ছবি ছাপা হওয়ার পর যে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে, ইয়াশ নিজেই সে কথা লিখেছেন তাঁর ফেসবুকে, “মানুষ বলে আমি মায়ের মতো দেখতে, আমি তা–ই। কিন্তু আমি রান্নাও করি মায়ের মতো এবং এ বিষয় নিয়ে আমি গর্বিত। ধন্যবাদ প্রথম আলোকে বিশেষ সন্ধ্যাটির জন্য...চমৎকার কিছু স্মৃতি তৈরি হলো।’
সময়ের ট্রেন্ড, ফ্যাশন ও পছন্দের বদল বোঝা যায় ‘নকশা’য় চোখ রাখলে। ‘ছোট চুলের বড় সাজ’ শিরোনামে ছাপা হওয়া লেখা ও ছবিগুলো যেমন পাঠক পছন্দ করেছেন, তেমনি ২ হাজার টাকার মধ্যে কীভাবে অতিথি আপ্যায়ন করা যায়, ১০ হাজার টাকায় কীভাবে পেতে পারেন বিয়ের গয়না—এসব পরামর্শও পাঠকের কাজে এসেছে।
‘অধুনা’য় ব্যারিস্টার মিতি সানজানার দেওয়া আইনি পরামর্শগুলো প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ছিল অনলাইনে ‘সর্বাধিক পঠিত’র তালিকায়। এ ছাড়া ‘শিশুর এসব প্রশ্নের উত্তর দেবেন কীভাবে’, ‘নতুন দম্পতিকে যে প্রশ্নগুলো করবেন না’, ‘জুম্বা: নাচতে নাচতেই কমবে ওজন’—এ রকম দৈনন্দিন জীবনঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকটি লেখা পাঠক পছন্দ করেছেন।
মো. সাইফুল্লাহ, সহসম্পাদক, ফিচার বিভাগ, প্রথম আলো