জাতীয় নারী ফুটবল দলের সাফল্যগাথার পেছনের গল্প নিয়ে প্রথম আলোর তৈরি প্রামাণ্যচিত্র সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে দেখানো হচ্ছিল হলরুমের বিশাল পর্দায়। এতে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সাফের ফাইনালে সাবিনা খাতুনদের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দৃশ্যটা দেখাতেই অতিথিদের তুমুল করতালি।
অবশ্য মাঠ ও মাঠের বাইরে এই নারী ফুটবলারদের লড়াইয়ের পথটা তত সহজ ছিল না। আর্থিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ছিল সমাজের চোখ রাঙানি। সেসব উপেক্ষা করে সারা দেশকে আনন্দে মাতিয়েছেন তাঁরা। এই নারী ফুটবলারদের গতকাল শনিবার সম্মাননা জানিয়েছে প্রথম আলো।
প্রথম আলোর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজিত প্রীতিসম্মিলনীতে এই সম্মাননা জানানো হয়।
‘প্রথম আলো সব সময় মেয়েদের ইতিবাচক সবকিছুর সঙ্গে আছে। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়।’সাবিনা খাতুন, জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক
নারী ফুটবলারদের উন্নয়নে প্রথম আলোর উদ্যোগে দেড় কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই অর্থ দিয়েছে। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন দলের ২৩ জন খেলোয়াড় এবং কোচ, সহকারীসহ ৩০ জনের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লাখ টাকার চেক। অর্থাৎ, মোট ৩০ লাখ টাকা। আরও ১ কোটি ২০ লাখ টাকার তহবিলের চেক সবার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের হাতে তুলে দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এই অর্থ ব্যয় হবে নারী ফুটবলের উন্নয়নে।
প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন রেদওয়ান রনি। প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী মেয়েদের লড়াইয়ের কথা, ভারত সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুরের কথা। কলসিন্দুর গ্রামের আটজন মেয়ে খেলেছেন এবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে। নানা দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এই মেয়েদের এগিয়ে নিতে ভূমিকা ছিল প্রথম আলোর। চ্যাম্পিয়ন নারী দলে খেলা ৮ জনসহ ২৫ জনকে বৃত্তি দেওয়া হতো প্রথম আলোর পক্ষ থেকে।
অনুষ্ঠানে সেই প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর পর মঞ্চে আসেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তাঁর অনুরোধে মঞ্চে ওঠেন সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী দলের ২৩ ফুটবলার এবং কোচ ও সহকারীরা। অতিথিরা বিপুল করতালি দিয়ে এই অদম্য খেলোয়াড় ও কোচদের সম্মানিত করেন এবং তাঁদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়।
আনিসুল হক বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান করে জেনেছেন, বাফুফের নারী ফুটবলের উন্নয়নের জন্য তহবিল সমস্যা রয়েছে। মেয়েদের ক্যাম্পে রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিপুল অঙ্কের তহবিল প্রয়োজন। এ জন্য প্রথম আলো অর্থ সংগ্রহ করেছে। এই তহবিলে অনুদান দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, হা-মীম গ্রুপ, এনভয় গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, সিটি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আকিজ গ্রুপ, জিপিএইচ ইস্পাত, ইউএস-বাংলা গ্রুপ, রেক্স লিমিটেড, হাতিল ফার্নিচার, নারী উদ্যোক্তা কণা রেজা, ট্রান্সকম লিমিটেড ও প্রথম আলো।
নারী ফুটবলারদের সম্মাননার এ পর্যায়ে মঞ্চে আসেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও ফেডারেশনের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার।
তহবিল গঠনে সহযোগীদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ, আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন, ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী পরিচালক কুতুব উদ্দিন আকসার রশীদ, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, রেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম খান মুরাদ, হাতিল ফার্নিচারের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান, নারী উদ্যোক্তা কণা রেজা ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমানকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
কাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘শিরোপাজয়ী মেয়েদের নিয়ে এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে গর্বিত, আনন্দিত। পরিকল্পনা করে তহবিল গঠন করায় প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’
এত বড় অঙ্কের আর্থিক অনুদান পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানান বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, প্রথম আলো এ দেশের এক নম্বর পত্রিকা। তারা মেয়েদের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে, এটা অনেক বড় কিছু।
অনুষ্ঠানে এসে ভীষণ উচ্ছ্বসিত জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় মেয়েদের ইতিবাচক সবকিছুর সঙ্গে আছে। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়।’
আনিসুল হকও সাবিনার কথায় সুর মেলান। তিনি বলেন, এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশের জয় হবেই।