ইয়েমেনিদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের সমর্থনেও স্লোগান দেন। গত বুধবার দেশটির হুতি নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায়
ইয়েমেনিদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের সমর্থনেও স্লোগান দেন। গত বুধবার দেশটির হুতি নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায়

হুতিদের অবস্থানে হামলা চলছেই

ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে আবারও হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এটা তাদের চতুর্থ দফা হামলা। গতকাল বৃহস্পতিবার হুতি গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে হুতিদের হামলার জবাবে গত সপ্তাহে ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। গতকালের হামলার পর ইরান–সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরাও লোহিত সাগরের জাহাজে হামলা চালিয়ে যাওয়া এবং তা আরও জোরদারের অঙ্গীকার করেছে।

হুতি গণমাধ্যম আল-মাশিরাহ টিভিতে এক হুতি সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আগ্রাসন যতই আমাদের ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, ফিলিস্তিনের বন্দরের দিকে যাওয়া ইসরায়েলি জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা অব্যাহত রাখব।’

আল-মাশিরাহ ও হুতি সংবাদমাধ্যম সাবা ডটনেট বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনের কয়েকটি জায়গায় আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বন্দরনগরী হোডেইডা ও তায়েজ শহর রয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারাও আরেক দফা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস ও সিএনএন। তবে ইয়েমেনে হুতিদের কোন কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে, কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, এসবের কিছুই জানানো হয়নি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন আরেকটি পণ্যবাহী জাহাজে গত বুধবার হুতিরা ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

গত সপ্তাহে তিন দফা হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনের প্রায় ৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এরপর মার্কিন বাহিনী একটি হুতি রাডার সাইটে আক্রমণ করেছিল। বুধবার হুতিদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইয়েমেনি ড্রোন ব্যবহার করে লোহিত সাগরে মার্কিন মালিকানাধীন পণ্যবাহী একটি জাহাজে হামলা চালানো হয়।

আবারও সন্ত্রাসী তালিকায় হুতি

এদিকে মার্কিন প্রশাসন হুতি বিদ্রোহীদের নাম নতুন করে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিশেষভাবে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী (এসডিজিটি) ও ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ (এফটিও) তকমা দিয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরই নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্পূর্ণ মানবিক বিবেচনায় হুতিদের সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। এরপর আবারও যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করল।

ইরান-সমর্থিত হুতিরা গত বছরের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশে এসব হামলা চালাচ্ছে তারা। হুতিরা ইয়েমেনের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।

লোহিত সাগর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। তাই হুতিদের একের পর এক জাহাজে হামলার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অবস্থান বদলাবে না হুতিরা

হুতিদের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, হুতি বিদ্রোহীদের নাম নতুন করে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ফলে তাদের অবস্থান বদলাবে না। ইসরায়েলি জাহাজে হামলা চলবে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেন, জাহাজ চলাচলের বাধা দূর করতে গাজায় যুদ্ধ থামা প্রয়োজন। দাভোসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরামে তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অপরাধ না থামা পর্যন্ত সবাই ভুগতে থাকবেন। সবাই লড়তে থাকবেন।