মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল

যুক্তরাষ্ট্রের পিসিই সূচক জুন মাসেও কমেছে, নীতি সুদ কমার আশা জোরদার

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি যে ফেডারেল রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের দিকে নেমে আসছে, এবার তার আরেকটি লক্ষণ পাওয়া গেছে। মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে নেমে আসলে নীতি সুদ কমাতে ফেডের দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে না।

ভোক্তা মূল্য সূচক প্রণয়নের ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আরেকটি সূচক হলো পার্সোনাল কনজাম্পশন এক্সপেনডিচার প্রাইস ইনডেক্স (পিসিই) বা ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচক। জানা গেছে, জুন মাসে এই সূচকের মান ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ; পূর্ববর্তী মে মাসে যা ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর সিএনএন।

এই খবরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শুক্রবার ডোও জোন্স সূচকের মান ৭০০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে; সেই সঙ্গে নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের মান বেড়েছে ১ শতাংশ।

শুক্রবারের এই পরিসংখ্যানে বোঝা গেল, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তি ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে চলমান লড়াইয়েও তারা ভালো করছে। গত তিন মাসে অর্থাৎ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে হঠাৎ করে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারায় আছে; শ্রমবাজার স্থিতিশীল।

মুডিস অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ ম্যাট কয়লার সিএনএনকে বলেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে যে হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে তা অনেকটাই কাটানো গেছে। তাঁর ব্যাখ্যা, বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছু পরিমাপগত সমস্যা ছিল, দ্বিতীয় প্রান্তিকে যার সমাধান করা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভও নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে ভাবতে পারছে।

ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদ বাড়ানোর পরও আশা করেছিল, অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে না। তাদের সেই আশা অনেকাংশে পূর্ণ হয়েছে। এ মাসেও ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক আছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এবারও ফেড নীতি সুদ অপরিবর্তিত রাখবে; এরপর সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা নীতি সুদ কমাতে শুরু করবে।

মূলত জ্বালানির দাম কমায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচক কমেছে বলে সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে জ্বালানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ; পণ্যের দামও কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও সেবার দাম কমেছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেশি ওঠানামা করে। সে জন্য এই দুটি ছাড়াও ভোক্তা মূল্য সূচক ও ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচক প্রণয়ন করা হয়। এই মানদণ্ডে মে মাসের তুলনায় জুন মাসে পিসিই সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ; আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ। গত তিন বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদের প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রর নীতি সুদের ওপর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা আর টালমাটাল সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তাঁরা ভাবছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, আরামে সুদ খাওয়া যাবে। বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে বিশ্ব জুড়ে হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়। ফলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ে; দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হয়।

এখন কথা হচ্ছে, নীতি সুদ কী। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। নীতি সুদহার বেশি থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়। সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেবে। ব্যাংক ঋণ কম নিলে মানুষও কম ঋণ পাবে। ফলে বাজারে অর্থের সরবরাহ কম থাকবে। বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকলে জিনিসপত্রের দাম বেশি বাড়তে পারে না।