অভিমত

আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের একার নয়

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে যত দিন ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ না হবে, তত দিন এই লড়াই থামবে না।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ছবির পাশে অ্যাডলফ হিটলারের ছবি সাঁটিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে একজন। গতকাল ইতালির রোমে
রয়টার্স

গাজার রাস্তায় এখন ইসরায়েলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া বহর। আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির মতো বোমা। উত্তর গাজায় সম্ভবত অক্ষত একটি ভবনও আর অবশিষ্ট নেই। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, ‘আমরা ওদের এমন শাস্তি দেব যে বহুকাল তারা সে কথা স্মরণ করে ভয়ে কাঁপবে।’ ইতিমধ্যে ৭ হাজার ৭০৩ গাজাবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আরও কত মানুষ নিহত হলে ইসরায়েলের মৃত্যুক্ষুধা মিটবে, কে জানে।

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একা ইসরায়েল ও নেতানিয়াহু নন, তাদের সঙ্গে আছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাস ও রাশিয়ার পুতিন একই জিনিস। তাদের দুজনকে কোনোভাবেই জিততে দেওয়া যাবে না। হামাসকে উচিত শিক্ষা দিতে তিনি ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সমর্থনে দুটি বিমানবাহী রণতরি পাঠিয়েছেন, ৭০০ নৌ সেনাকে পূর্ণ আক্রমণের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ব্রাজিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সামান্য বিরতি দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছিল। সে প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, এই প্রস্তাবে কোথাও হামাসের সন্ত্রাসী কাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়নি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, আত্মরক্ষার পুরো অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এক কদম এগিয়ে বলেছেন, যতভাবে সম্ভব ইসরায়েলকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করবে জার্মানি।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি হত্যা একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। এই হামলায় সামরিক-বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। অনেককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। কাজটি নিন্দনীয়, হামাস কোনো যুক্তি দেখিয়েই তাকে ন্যায়সংগত প্রমাণ করতে পারবে না। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সব যুদ্ধেরই নীতিমালা, আইনকানুন রয়েছে।

মরো, পালাও অথবা বশ্যতা মানো

নেতানিয়াহু, বাইডেন ও অন্য ইউরোপীয় নেতারা যখন হামাসকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন, তখন মনে হয় একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছেন তাঁরা। অথচ গাজা কোনো স্বাধীন দেশ নয়, ফিলিস্তিনও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রয়োগে সক্ষম কোনো রাষ্ট্র নয়। গাজা মাত্র ১৪১ বর্গমাইলের ছোট্ট একটি ভূখণ্ড, যেখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ গাদাগাদি করে মানবেতর জীবন যাপন করেন। ভিক্ষা ছাড়া উপার্জনের কার্যত কোনো পথ তাঁদের সামনে খোলা নেই। তাঁদের একটাই অপরাধ, কোনোভাবেই ইসরায়েলের অধিগ্রহণ মানতে রাজি নয় এমন একটি সংগঠন হামাস সেখানকার ক্ষমতায়।

১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তি অনুসারে একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) গঠিত হয়েছে বটে, কিন্তু ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়া তাদের কুটোটিও সরানোর অধিকার নেই। কোনো ফিলিস্তিনি নিজ গ্রাম বা শহর থেকে অন্য গ্রাম বা শহরে যাবে, তারও জো নেই। একের পর এক দেয়াল তুলে, চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে একের পর এক ইহুদি বসতি গড়ছে।

এসব বসতির ইহুদি বাসিন্দারা প্রত্যেকে সশস্ত্র। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গত তিন সপ্তাহে এসব ইহুদি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর এক শ-এর বেশি হামলা চালিয়েছে। নাৎসিপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেছেন, তিনি চান পশ্চিম তীর থেকে সব ফিলিস্তিনিকে বহিষ্কার করে সেখানে ইহুদি বসতি করা হোক। তিনি এমনও বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য জর্ডান রয়েছে, সেখানেই তাদের চলে যাওয়া উচিত। হাতের তিন আঙুল গুনে তিনি বলেছেন, গাজাবাসীর সামনে এখন তিনটি পথ খোলা—‘মরো, পালাও অথবা আমাদের বশ্যতা স্বীকার করো’।

ইসরায়েলি সাংবাদিক গিদিয়ন লেভি এই আগ্রাসী নীতিকে জাতিবিদ্বেষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিশেষত বেদুইনদের তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সেখানে নির্মিত হচ্ছে নতুন ইহুদি বসতি। কাগজ-কলমে না বলা হলেও এ যে জবরদখল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লেভির ভাষায়, ‘পশ্চিম তীরে যা হচ্ছে তা হলো ইসরায়েলি জাতিবিদ্বেষের নগ্ন উদাহরণ।’

গাজার অবস্থা আরও করুণ। ২০০৭ সাল থেকে সেখানে ইসরায়েলি অবরোধ চলছে। ঔপনিবেশিক প্রভুর অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে ঢোকার, বেরোনোর উপায় নেই। ইসরায়েল সম্মত না হলে সেখানে পানি, খাদ্য বা জ্বালানি কিছুই আসবে না। গাজাকে একটি উন্মুক্ত কারাগার বলা হয়, কিন্তু সে কথাও সঠিক নয়। কয়েদিরা তাদের মেয়াদ শেষে কারাগার থেকে ছাড়া পায়। গাজাবাসীর মুক্তি নেই।

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের লক্ষ্য পরিষ্কার। ৭ অক্টোবর হামলার প্রতিশোধ, হামাসকে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এ জন্য দেদার বেসামরিক মানুষ মরলেও কোনো আপত্তি নেই। সে দেশের যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ত বলেই ফেলেছেন, গাজায় তাঁরা এক ফোঁটা দানাপানি ঢুকতে দেবেন না, বিদ্যুৎ বা জ্বালানি দেবেন না।

ঠিক এই অবস্থায় একজন ফিলিস্তিনি কী করতে পারে বা তার কী করা উচিত?

এই প্রশ্নের একটি উত্তর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রেভল্যুশনারি লেফট রেডিও। সাম্প্রতিক এক পডকাস্টে সঞ্চালক ব্রেহট ও’শিয়া স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমি হলে হাতের কাছে যা পেতাম, তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তাম। বন্দুক পেলে তার ব্যবহার করতাম। জবরদখলের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত, ঠিক যেমন ন্যায়সংগত ছিল ইয়াংকি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে নেটিভ আমেরিকানদের বিদ্রোহ।

পাঠক পুরো পডকাস্টটি শুনতে পারেন।

আত্মরক্ষার অধিকার শুধু কি ইসরায়েলের

ইসরায়েলের আত্মরক্ষার যুক্তির বেলুনে প্রথম সুইটি ফুটিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। হামাসের আক্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই হামলা শূন্য থেকে হয়নি। এর পেছনে কারণ রয়েছে। ৫৬ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা এক অবর্ণনীয় অধিগ্রহণের শিকার। দিনের পর দিন তারা প্রত্যক্ষ করেছে, কীভাবে তাদের জন্য নির্ধারিত ভূমি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দখলে চলে গেছে, কীভাবে দৈনন্দিন সহিংসতা তাদের সন্ত্রস্ত করে রেখেছে, কীভাবে এই অধিগ্রহণের ফলে তাদের অর্থনীতি স্থবির হয়ে রয়েছে। তারা গৃহচ্যুত হয়েছে, তাদের বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

মহাসচিবের কথাতেই স্পষ্ট, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি অধিগ্রহণের শেষ না হওয়া পর্যন্ত পশ্চিম তীর ও গাজায় বিক্ষোভ ও সশস্ত্র বিদ্রোহ শেষ হবে না। মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সেটাই কারণ। হামাসের সশস্ত্র হামলা তার একটি উপসর্গ মাত্র।

আমাকে একাধিক ফিলিস্তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো মরেই আছি, মরতে কোনো ভয় নেই। মুক্তির এই লড়াই চলবেই।’ ১৯৭৪ সালে প্রথম জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়ে ঠিক এ কথাই বলেছিলেন ইয়াসির আরাফাত, ‘আমি বিদ্রোহী, আমার লক্ষ্য মুক্তি।’ সে ভাষণে আরাফাত স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে সন্ত্রাসী বা অন্য যে নামেই ডাকো, আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে আমি একজন বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধা।’

আরাফাতের সেই ভাষণ অর্ধশতক পরেও প্রাসঙ্গিক। পাঠক চাইলে ভাষণটি পড়তে পারেন।

ইসরায়েল বনাম হামাস

সন্দেহ নেই, ইসরায়েল এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও তার রয়েছে পারমাণবিক বোমা। রয়েছে যেকোনো মুহূর্তে লড়াইয়ে প্রস্তুত প্রায় সাত লাখ নিয়মিত ও রিজার্ভ সৈনিক। বছরে সামরিক খাতে তার বাজেট বরাদ্দ প্রায় ২ হাজার ২ কোটি ডলার, যা ইরান, মিসর ও লেবাননের সম্মিলিত বাজেটের চেয়ে বেশি।

এমন শক্তিধর ইসরায়েল যার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে নেমেছে, সেই হামাসের শক্তি কতটা। সিআইএর হিসাবমতে, হামাসের সামরিক বাহিনী কাসাম ব্রিগেডের মোট সদস্য ২০ থেকে ২৫ হাজার। এ ছাড়া ৩ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনীও রয়েছে। কোনো ট্যাংক নেই, কোনো বিমান নেই। আছে সর্বসাকল্যে হাজার পাঁচেক রকেট। এমন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুধু ইসরায়েল নয়, তাকে সঙ্গ দিতে মার্কিন রণতরি ও মেরিনরাও প্রস্তুত।

সন্দেহ নেই, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই হামাসকে সামরিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন, গাজা দখলের পর কী হবে? কে শাসন করবে এই অঞ্চল, কে দায়িত্ব নেবে এখানকার মানুষের? আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অধিগ্রহণকারী শক্তি হিসেবে এই দায়িত্ব ইসরায়েলের, কিন্তু তারা কি এ জন্য প্রস্তুত?

আমার মনে হয়, ইসরায়েলের আসল লক্ষ্য, এই অঞ্চল থেকে যতটা সম্ভব ফিলিস্তিনিদের তাড়ানো। ইতিমধ্যে প্রায় ১২ লাখ মানুষকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর গাজা এখন কার্যত বিধ্বস্তস্তূপ।

কিন্তু এই ১২ লাখ মানুষ যাবে কোথায়? ইসরায়েল বলছে, মিসরের সিনাইয়ে তারা যেতে পারে, সেখানে বিস্তর বিরান ভূমি রয়েছে। অথবা জর্ডানে, সেখানে এমনিতেই মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ফিলিস্তিনি। একবার এসব ফিলিস্তিনিকে বাইরে ঠেলে দিতে পারলে ইসরায়েল তাদের আর কখনো ফিরতে দেবে না।

১৯৪৮ সালে প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সাত লাখ ফিলিস্তিনি গৃহহারা হয়েছিল। তারা গাজা ও পশ্চিম তীর ছাড়াও প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই নাকবা বা মহাবিপর্যয়ের পর প্রায় ৭৫ বছর কেটে গেছে। ফিলিস্তিনিরা এখনো গৃহহীন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে তারা দ্বিতীয়বার উদ্বাস্তু হয়। এবার তারা তৃতীয়বারের মতো ঘরছাড়া হবে।

তাহলে উপায়

এই সংকট সমাধানের কোনো জাদুকরি ফর্মুলা আমার জানা নেই। তবে এটুকু বুঝি, ইসরায়েলের অধিগ্রহণ শেষ না হলে এই লড়াইও শেষ হবে না। হামাসকে গুঁড়িয়ে দিলে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির স্বপ্নকেও গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে—ইসরায়েল এমনটা ভেবে থাকলে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। ইসরায়েলের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন তাদের বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন, যার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে কার্যত শূন্য।

অবস্থা পরিবর্তনের আরেক সম্ভাব্য পথ, আরব বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তন। আরব বিশ্ব মানেই কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক পরিবারতন্ত্র। তাদের কাছে ফিলিস্তিনি স্বার্থ মোটেই জরুরি নয়; বরং ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ অনেক বেশি লাভজনক। আরব বাদশা ও প্রেসিডেন্টরা যা–ই বলুন বা তলেতলে ইসরায়েলের সঙ্গে যত আঁতাতই করুন, আরব সড়কের আওয়াজ কিন্তু ভিন্ন। অধিকাংশ আরব নাগরিকই চান, তাঁদের ফিলিস্তিনি ভাইদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।

এ জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদ বাধলে তাতেও আপত্তি নেই। ২০১১ সালে একবার ‘আরব বসন্ত’ আগুনের ফুলকি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আবারও যে তা ঘটবে না, তা আগাম বলা কঠিন। তখন এদের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের পাশে সহযোগী যোদ্ধা হয়ে দাঁড়াবে।

তবে এর আগে একটি জরুরি কাজ রয়েছে। ২০০৬ থেকে ফিলিস্তিনিরা অভ্যন্তরীণ কলহে বিভক্ত। গাজায় হামাস ও পশ্চিম তীরে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ ক্ষমতায়। এই দুই দল যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, সে জন্য পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে ইসরায়েল। স্বয়ং নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনায়াসে চলতি অধিগ্রহণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।

ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ভেতরও আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কৌশলগত স্বার্থ (ইরানকে ঠেকানো) রক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর পথ, ধনী আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ। মার্কিন উমেদারিতে ইতিমধ্যে আধা ডজন আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যও শুরু হয়েছে। এই ধারায় সবচেয়ে বড় ‘পুরস্কার’ হলো সৌদি আরব। তাকে বাগে ফেলা গেলে কেল্লা ফতে।

এই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের একটি ইতিবাচক দিকও আমরা ভাবতে পারি। আমার বিশ্বাস, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের নবগঠিত সম্পর্ককে ক্ষমতার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহারে সক্ষম হলে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরায়েল তার অবস্থান বদলাতে উৎসাহী হবে।