যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ সাহসিকতার সঙ্গেই আইনি লড়াই চালিয়েছেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। প্রকাশ্য এ লড়াইয়ে তাঁকে কখনো বিব্রত হতে দেখা যায়নি। তবে নিউইয়র্কের আদালতে তাঁর দেওয়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি ৪৫ বছর বয়সী এ নারী।
২০০৬ সালে স্টর্মির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে এই পর্ন তারকাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেন তিনি। ব্যবসায়িক নথিতে এ অর্থ লেনদেনের বিষয়টি গোপন রাখায় জালিয়াতির অভিযোগে নিউইয়র্কের আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়। তিনি সবকটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রাম্প–সমর্থকদের নানা গঞ্জনা-ব্যঞ্জনা সহ্য করার পর মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন স্টর্মি। তবে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হওয়া পর কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি। তাঁর স্বামী ব্যারেট ব্লেড সিএনএনকে বলেন, ‘ও এখনো ভাবনার মধ্যে আছে।’
এখন হুমকির ধরনে ভিন্নতা এসেছে। সরাসরি হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘বাড়িতে আসছি, তোমার গলা কাটব’, ‘তোমার মেয়ের মরে যাওয়া উচিত।’—স্টর্মি ড্যানিয়েলস, পর্ন তারকা
এই নীরবতার মানে আরও কিছুও হতে পারে বলে ইঙ্গিত করেছেন ব্যারেট ব্লেড। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, এমএজিএর হতচ্ছাড়াগুলো তাঁর পিছু নেবে।’ এমএজিএ বলতে তিনি ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ প্রচারাভিযানকে বুঝিয়েছেন। অবশ্য, অত্যন্ত বিভক্তির দেশটিতে তাঁর এ আশঙ্কা অমূলক নয়।
নিউইয়র্কের আদালতে যাওয়ার সময় ড্যানিয়েলস বুলেটপ্রুফ পোশাক পরতেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর আইনজীবী ক্লার্ক ব্রিউস্টার এ তথ্য জানিয়েছেন।
কোন পরিস্থিতিতে ড্যানিয়েলস এমন পোশাক পরতে বাধ্য হয়েছেন, সে সম্পর্কে তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘ওই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ ও ভয়ানক ছিল।’ তিনি মনে করেন, ড্যানিয়েলসকে যে ধরনের আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তাতে এ পোশাক পরাটা খুব স্বাভাবিক।
বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রাম্প-সমর্থকদের নানা গঞ্জনা-ব্যঞ্জনা সহ্য করার পর মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন স্টর্মি। তবে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হওয়া পর কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি। তাঁর স্বামী ব্যারেট ব্লেড সিএনএনকে বলেন, ‘ও এখনো ভাবনার মধ্যে আছে।’
এদিকে স্টর্মির স্বামী বলেন, ম্যানহাটানের কৌঁসুলিদের দায়ের করা ওই মামলায় তাঁর স্ত্রী আদালতের কক্ষে ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে চাননি। বিচারকাজ শেষ হওয়ায় তিনি এখন স্বস্তিতে আছেন। তাঁর কাঁধ থেকে বিশাল এক বোঝা সরে গেছে। তবে মানসিক চাপ একেবারে দূর হয়নি।’
ব্লেড বলেন, ‘সামনে কী হবে, তা নিয়ে তাঁর (ড্যানিয়েলস) ঘাড়ে আরেক দুশ্চিন্তার বোঝা চেপে বসেছে।’ ব্লেডের আশঙ্কা, এ বোঝা হয়তো তাঁদের দিনের পর দিন বয়ে বেড়াতে হবে।
সম্প্রতি ‘স্টর্মি’ নামক প্রামাণ্যচিত্রে স্টর্মিও ট্রাম্প–সমর্থকদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে অনবরত অপমান করে গেছেন। ২০১৮ সালে তাঁরা তাঁকে নানা অপবাদ দিয়েছেন।
স্টর্মি আরও বলেন, ‘এখন হুমকির ধরনে ভিন্নতা এসেছে। সরাসরি হুমকি দিয়ে বলা হয়, “বাড়িতে আসছি, তোমার গলা কাটব”, “তোমার মেয়ের মরে যাওয়া উচিত।”’
স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি আদালত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলায় রায় দেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। আগামী ১১ জুলাই মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। তাতে তাঁর কারাদণ্ড হতে পারে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, তাঁকে জরিমানা করার সম্ভাবনাই বেশি।
রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, এটা তাঁর জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি ন্যায়বিচার পাননি। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন সময় এ রায় ঘোষণা করা হলো, যখন কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার প্রেসিডেন্ট পদে আসতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে রায়ের কারণে তাঁর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোনো বাধা আসবে না।