নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ‘এক দিনের মধ্যে’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। উত্তর আটলান্টিক প্রতিরক্ষা সামরিক জোটের (ন্যাটো) কার্যকারিতা নিয়ে ট্রাম্প আগেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে যাচ্ছেন ট্রাম্প। বৈদেশিক নীতি ও কৌশল বিষয়ে ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা আগে থেকে অনুমান করা খুবই কঠিন। তাই তিনি নিজের আগের মেয়াদের বিদেশনীতিতে এবারও অবিচল থাকবেন, নাকি পরিবর্তন আনবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘ঘনিষ্ঠ’। এবারের নির্বাচনী প্রচারে তাঁর ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন। কমলা বলেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) চান, ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করুক। এতে পুরো ইউরোপ বিপদে পড়বে।’
ট্রাম্প নিজে কীভাবে ‘এক দিনে’ ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন, সে ব্যাখ্যা দেননি; বরং তিনি যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন তিনি।
তবে গত মে মাসে ট্রাম্পের দুজন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধান একটি গবেষণাপত্র লেখেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা উচিত। তবে এই শর্তে যে কিয়েভ রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করবে।
রাশিয়াকে খুশি করতে পশ্চিমারা ন্যাটোতে ইউক্রেনের বহুকাঙ্ক্ষিত প্রবেশ বিলম্বিত করতে পারে বলেও মনে করেন ট্রাম্পের সাবেক ওই নিরাপত্তাপ্রধানেরা। তাঁরা পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার দখল থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ ভূখণ্ড মুক্ত করার আশা ছাড়া ইউক্রেনের উচিত হবে না। কিন্তু সেই আলোচনা বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
সাবেক এই দুই নিরাপত্তাপ্রধান যা বলেছেন, ট্রাম্প নিজে তার কতটা ধারণ করেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি (ট্রাম্প) ঠিক কী ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করেন, সে বিষয়ে একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর অগ্রাধিকার, (ইউক্রেন) যুদ্ধ বন্ধ করা, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট না হয়। কারণ, তাঁর কাছে ‘আমেরিকা প্রথম’।
ট্রাম্পের এই ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি ন্যাটোর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘একজনের জন্য সবাই এবং সবার জন্য একজন’ স্লোগানে ন্যাটো সামরিক জোট গঠিত হয়।
ন্যাটোর বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৩২। ন্যাটো জোটের কার্যকারিতা নিয়ে ট্রাম্প প্রথম থেকেই সংশয়বাদী। ট্রাম্পের অভিযোগ, আমেরিকা সুরক্ষার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ইউরোপ বিনা খরচে তার সুবিধা নিচ্ছে।
ট্রাম্প যদি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার করে নেন, তবে সেটা প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলা ট্রান্স–আটলান্টিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে। এতে অবশ্যই বড় বিতর্ক সৃষ্টি করবে।
ট্রাম্পের অনেক মিত্র অবশ্য মনে করেন, ন্যাটো নিয়ে ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থান আসলে তাঁর আলোচনার একটি কৌশল। ট্রাম্প চান, ন্যাটোর প্রতিটি সদস্য নিজের ভাগের প্রতিরক্ষা ব্যয় নিজেরাই করুক।
ট্রাম্পমিত্ররা যা–ই বলুন, বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্পের জয় ন্যাটো নেতৃত্বের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হবে।