যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে টিম ওয়ালজ হয়তো খুব বেশি পরিচিত কোনো নাম নন। তবে গতকাল মঙ্গলবার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস তাঁকে রানিং মেট হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের এ গভর্নর নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠেছেন।
আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইতিমধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন কমলা হ্যারিস। তিনি রানিং মেট তথা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়ালজকে বেছে নিয়ে বলেন, তাঁকে রানিং মেট হিসেবে বেছে নিতে পেরে তিনি গর্ববোধ করছেন।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কমলা হ্যারিস লিখেছেন, ‘একজন গভর্নর হিসেবে, একজন কোচ হিসেবে ও যোদ্ধা হিসেবে তিনি তাঁর মতো শ্রমিক পরিবারগুলোর জন্য কাজ করেছেন। তাঁকে দলে পাওয়াটা আনন্দের।’
এদিকে ওয়ালজ বলেন, কমলা হ্যারিস তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেওয়ায় তিনি ‘আজীবনের সম্মাননা’ বোধ করছেন।
কমলা হ্যারিস যদি নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারেন, তবে ওয়ালজ হবেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রে ভাইস প্রেসিডেন্টদের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগুলো সীমিত হলেও তাঁরা সরকারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি ও সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
ওয়ালজ কে
৬০ বছর বয়সী ওয়ালজ একই সঙ্গে নির্বাহী ও আইনবিষয়ক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। ২০১৮ সালে তিনি প্রথমবারের মতো মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হন। চার বছর পর নির্বাচিত হন দ্বিতীয় মেয়াদে। মিনেসোটা ডেমোক্রেটিক শিবিরের শক্ত ঘাঁটি না হওয়া সত্ত্বেও তিনি খুব সহজে দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে ১২ বছর দায়িত্বপালন করেছেন ওয়ালজ। তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় মিনোসোটার একটি প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন ওয়ালজ। ১৭ বছর বয়সে আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন তিনি। এরপর ২৪ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেন। কংগ্রেস সদস্য হওয়ার আগে স্কুলশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন তিনি।
গভর্নর হিসেবে নীতিমালা প্রণয়নের দিক থেকে ওয়ালজ কিছুসংখ্যক প্রগতিশীলের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। মিনেসোটার মতো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যটিতে বামপন্থী শিবিরের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করায় তিনি সমাদৃত হয়েছিলেন।
গত ছয় বছরে নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ টিউশনের ব্যবস্থা, সরকারি স্কুলগুলোতে বিনা মূল্যে প্রাতরাশ ও দুপুরের খাবার দেওয়া, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিনোদনের উপকরণ হিসেবে মারিজুয়ানা সেবনের বৈধতা দেওয়া, শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়ানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুমোদন করেছেন ওয়ালজ।
ওয়ালজকে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে অত্যন্ত সোচ্চার ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তা ছাড়া ২০৪০ সাল নাগাদ মিনেসোটাকে কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ–ব্যবস্থায় রূপান্তর করাসহ জলবায়ুবিষয়ক অনেক উদ্যোগেও সমর্থন দিয়েছেন তিনি।
রিপাবলিকানরা বলতে পারেন, ওয়ালজের কাজের রেকর্ড অনেক বেশি উদারবাদী। যদিও গভর্নরকে তাঁর নীতি থেকে টলানো যায় না।
এ ব্যাপারে গত মাসে সিএনএনকে ওয়ালজ বলেন, ‘কী অসাধারণ! বাচ্চাকাচ্চা খেতে পাচ্ছে আর নারীরা তাঁদের নিজস্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন। আমরা শীর্ষ পাঁচটি ব্যবসায়িক ও তিনটি সুখী অঙ্গরাজ্যের একটি। এ ক্ষেত্রে তাঁরা যদি আমাকে কোনো তকমা দিয়ে দিতে চান, তবে আমি তা অত্যন্ত সাদরে মেনে নেব।’
জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জেনিফার ভিক্টর আল–জাজিরাকে বলেন, ওয়ালজকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি কৌতূহলের। তাঁর মতো মার্কিন জনগণের অনেকে হয়তো গতকালের আগপর্যন্ত ওয়ালজ নাম শোনেননি।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় (যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের অঙ্গরাজ্যগুলো) আবহের’ সঙ্গে ওয়ালজের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দৃশ্যত, এ ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের জন্য হ্যারিস তাঁকে বাছাই করেছেন। তিনি মনে করছেন, তাঁর এ পছন্দ দোদুল্যমান ভোটারদের কাছে আরও বেশি আবেদন তৈরি করতে পারে।
জেনিফার ভিক্টর বলেন, ‘অতীতে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের যেসব রূপরেখা সফলভাবে ব্যবহার করতে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে (ওয়ালজকে বেছে নেওয়া) তেমনটা হয়নি। আমি মনে করি, এতে আরও অনেক বেশি মানুষ আন্দোলিত হয়েছেন।’
বৈদেশিক নীতিনির্ধারণে গভর্নরদের ভূমিকা থাকে না। সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য সমর্থন ব্যক্ত করেছেন ওয়ালজ। যুক্তরাষ্ট্রের এই মিত্রদেশের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনি অঙ্গরাজ্যে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কংগ্রেসে দায়িত্বপালনকালেও ওয়ালজ ইসরায়েলপন্থী অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০১০ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘ইসরায়েল এই অঞ্চলে আমাদের সবচেয়ে সত্যিকারের ও ঘনিষ্ঠ মিত্র।’
তবে গত মার্চে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিরোধিতা করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের প্রায় ১৯ শতাংশ ডেমোক্রেটিক ভোটার বাইডেনকে সমর্থন দেননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে হওয়া ভোটাভুটিতে তাঁরা ‘আনকমিটেড’ ভোট দিয়েছিলেন।
আনকমিটেড ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তাঁরা বাইডেনকে সমর্থন দেবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।
এ অবস্থায় ওয়ালজ বলেন, যেসব মানুষ ‘আনকমিটেড’ ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কথা শুনতে হবে। ওই সময় এমপিআর নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়ালজ বলেন, ‘এই মানুষেরা বদল চান। তাঁরা হতাশ। কিন্তু এটা আমার জন্য ভালো যে তাঁরা তাঁদের ভোট দিচ্ছেন ও পরিবর্তন চাইছেন।’