এলিস স্টেফানিক ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো নারী এত কম বয়সে আইনসভার সদস্য হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। বৈশ্বিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর স্টেফানিক এমন সময় এ পদের জন্য মনোনীত হলেন, যখন ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক সংঘাত ক্রমেই বাড়ছে।
রাজনীতিতে আসার পর শুরুর দিকে মধ্যপন্থী রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন রিপাবলিকান পার্টির এই নারী সদস্য। সে সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করতেন স্টেফানিক। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে ওঠেন ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সমর্থক।
নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প স্টেফানিক সম্পর্কে বলেছেন, তিনি একজন অবিশ্বাস্য রকম শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবলের মানুষ। স্টেফানিককে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় তাঁর একজন বিশ্বস্ত সমর্থক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এলিস স্টেফানিক ইসরায়েলের একজন কট্টর সমর্থক। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে জাতিসংঘ পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়নি দাবি করে তিনি বিশ্বসংস্থার সমালোচনা করেছেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে জাতিসংঘের বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ডের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন স্টেফানিক। তিনি বলেন, ট্রাম্প তাঁকে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনোনীত করায় তিনি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এখন তিনি তাঁর সিনেটের সহকর্মীদের সমর্থন পাওয়ার আশায় আছেন। কারণ, আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদে নিয়োগ পেতে তাঁকে সিনেটরদের সর্বোচ্চ ভোট পেতে হবে।
এলিস স্টেফানিকের বৈদেশিক নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব কম। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দাবিষয়ক হাউস আর্মড সার্ভিস কমিটি ও হাউস পারমানেন্ট সিলেক্ট কমিটিতে কাজ করেছেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর মার্কিন আইনসভায় ইসরায়েলের সমর্থকদের মধ্যে এলিস স্টেফানিক ছিলেন সবচেয়ে সরব ব্যক্তিদের একজন।
গত মাসে এলিস স্টেফানিক দাবি করেন, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের চেষ্টা করার পর তিনি এ দাবি করেন।
গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ডেনি ড্যানন এলিস স্টেফানিকের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছেন।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতাদের একজন এলিস স্টেফানিক উত্তর নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ২০০৬ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনিই তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি কলেজ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
স্নাতক শেষ করার পরপরই রাজনীতিতে নাম লেখান এলিস স্টেফানিক। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন তিনি। পরে বুশের চিফ অব স্টাফ জশুয়া বোল্টেনের সিনিয়র সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান।
২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী মিট রমনির রানিংমেট পল রায়ানের প্রচারাভিযানের শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন এলিস স্টেফানিক। ওই বছর মিট রমনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বারাক ওবামার কাছে হেরে যান।
এরপর এলিস স্টেফানিক উত্তর নিউইয়র্কে ফিরে আসেন এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য সেখানকার ২১তম ডিস্ট্রিক্ট থেকে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা আসনে ভোটের ফলাফল উল্টো দেন। ২০ পয়েন্টের ব্যবধানে জয়লাভ করে সবচেয়ে কম বয়সে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।