বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে কিয়েভের জন্য আরও সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন, সেটার ওপরই ইউক্রেনের ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করছে। তাই এ নির্বাচনের আগেই নিজেদের জন্য আরও সহায়তা নিশ্চিত করতে চান জেলেনস্কি।
গতকালের বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য বাড়তি ২৪০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা মঞ্জুর করেন বাইডেন। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরও ৫৫০ কোটি ডলার সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এরপর কে নতুন মার্কিন প্রশাসনের হাল ধরবেন, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাইডেন বলেছেন, ‘এখন আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস জিতলে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা অব্যাহত থাকবে, এমন আশ্বাস পেয়েছেন জেলেনস্কি পেয়েছেন।
কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সংহতি প্রবল ধাক্কা খাবে। ট্রাম্প প্রয়োজনে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের কিছু অংশে রাশিয়ার কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
কমলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নীতির প্রতি সমর্থনের অভিযোগ এনেছেন। তাঁর মতে, ট্রাম্পের এমন প্রস্তাব বিপজ্জনক। তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে কমলা এ কথা বলেছেন।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, তিনি শুক্রবার (আজ) জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এর আগে গত বুধবার নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে এক নির্বাচনী সভায় ট্রাম্প জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন এক নেতাকে কোটি কোটি ডলার দিয়ে চলেছে, যিনি কোনো বোঝাপড়া করতে প্রস্তুত নন। সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতে, বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় যেকোনো মূল্যে শান্তি চুক্তি করা অনেক ভালো।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের শুরুতেই জেলেনস্কি যেভাবে বাইডেনের শহরে এক অস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করেছেন, মার্কিন নির্বাচনের আগে এমন আচরণেরও সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।
ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা যতটা সম্ভব ‘ট্রাম্প-প্রুফ’ করতে আগামী মাসে জার্মানিতে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা করছে বাইডেন প্রশাসন। ৫০টির বেশি দেশের সহায়তার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ন্যাটোর নেতৃত্বে রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় ভবিষ্যতেও ইউক্রেনকে সাহায্য করার পথ খোলা রাখার চেষ্টা করছেন বাইডেন। তবে তিনি জেলেনস্কির অনুরোধ মেনে রাশিয়ার গভীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছাড়পত্র দেবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু ইউক্রেনের পূর্ব দিকে রাশিয়ার বেড়ে চলা সাফল্যের মুখে যুদ্ধের গতি বদলাতে এমন পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর জেলেনস্কি।