চীনা গোয়েন্দা বেলুন শনাক্ত ও তা ধ্বংস করা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এবার যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ‘রহস্যজনক বস্তুর’ দেখা পাওয়া গেছে। পরে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সেটা ধ্বংসও করা হয়েছে। যদিও রহস্যজনক বস্তুটি কী ছিল, সেটা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আলাস্কার আকাশে ওই বস্তুকে উড়তে দেখা যায়। আকাশে অনেক ওপর দিয়ে সেটা উড়ছিল।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, আলাস্কার আকাশে শনাক্ত করা উড়ন্ত বস্তুটি আসলে কী ছিল, সেটা এখনো জানা যায়নি। সেটার উদ্দেশ্য ও কোথা থেকে এসেছে—এসব প্রশ্নের উত্তরও অজানা।
জন কিরবি আরও জানান, ওই বস্তু ৪০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল। তাই উড়োজাহাজ চলাচলে ঝুঁকি বিবেচনায় সেটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সামরিক বাহিনীকে বস্তুটি ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন। মূলত, এর পরপরই যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে সেটিকে ভূপাতিত করা হয়।
আলাস্কার আকাশে উড়তে থাকা অজানা বস্তুটিকে ধ্বংস করার ঘটনাকে ‘সফলতা’ বলে চিহ্নিত করেছেন জন কিরবি। তিনি বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে শনাক্ত হওয়া চীনা গোয়েন্দা বেলুনটির তুলনায় আকারে বেশ ছোট ছিল। এটার আকার একটি ছোট প্রাইভেট কারের সমান।
জন কিরবি বলেন, এ বস্তু কোথা থেকে এসেছে, কোনো দেশ পাঠিয়েছে, নাকি কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এটি, কী উদ্দেশ্যে বস্তুটি আলাস্কার আকাশে উড়ছিল—এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশ পাওয়ার পর আলাস্কার আকাশে এফ-২২ র্যাপ্টর যুদ্ধবিমান ওড়ানো হয়। পরে সেটি এআইএম-৯এক্স ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রহস্যজনক বস্তুটি ধ্বংস করে। তিনি আরও জানান, এই একই যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে চীনা গোয়েন্দা বেলুনটিও ধ্বংস করা হয়েছিল।
২ ফেব্রুয়ারি পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে গোয়েন্দা বেলুনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের এ বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ছে। এটি প্রায় ২০০ ফুট (৬০ মিটার) লম্বা ছিল। আকাশের অনেক ওপর দিয়ে উড়ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেন্টাগনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বেলুনটি গুলি করে ভূপাতিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে বেলুনটি যেসব এলাকার ওপর দিয়ে উড়ছিল, সেখানে বসবাসরত মানুষের ক্ষতি বিবেচনায় তখন তা করা হয়নি।
পরে শনিবার এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দেয়, ওই ধ্বংসাবশেষ তারা চীনকে ফেরত দেবে না।
এ ঘটনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁর চীন সফর স্থগিত করেন। ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অনুপ্রবেশ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনপরিপন্থী কাজ।
‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে দুঃখ প্রকাশ করে চীন। দেশটির দাবি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো এ বেলুন বাতাসে ভেসে পথ ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি উড়ে যাওয়ার এ ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।
তবে বেলুনটি ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।
বেলুনকাণ্ড নিয়ে যখন বেইজিং-ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়, তখন পেন্টাগন জানায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, লাতিন আমেরিকার আকাশেও গোয়েন্দা বেলুন উড়িয়েছে চীন। কলম্বিয়ার আকাশে এমন একটি বেলুন শনাক্তের দাবি করে দেশটির সরকার।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ধ্বংস করা চীনা বেলুনটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। এটি একটি নৌবহরের অংশ। বেলুনটি পাঁচটি মহাদেশজুড়ে ৪০টির বেশি দেশের ওপর দিয়ে উড়ে এসেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে চীন। জো বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ওই দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এ বিষয় নিয়ে।