মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক পাচার চক্র সিনালোয়া কার্টেলের নেতা ইজমায়েল ‘এল মায়ো’ জামবাদাকে গ্রেপ্তার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার টেক্সাসের এল পাসো থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এল মায়োকে বিশ্বের অন্যতম বড় মাদকসম্রাট হিসেবে ধরা হয়।
ইজমায়েল জামবাদা (৭৬) ও হোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজম্যান সিনালোয়া কার্টেল গঠন করেন। এল চাপো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগারে বন্দী।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানান, এল মায়োর আগে এল চাপোর ছেলে হোয়াকিন গুজম্যান লোপেজকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা জামবাদার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ‘ফেনটানাইল’ তৈরি ও বিতরণের অভিযোগ আনেন। ফেনটানাইল হেরোইনের চেয়ে শক্তিশালী। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার, খুন, অপহরণ, অর্থ পাচার ও সংঘটিত অপরাধের অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এল মায়োকে এখন বিশ্বের অন্যতম বড় মাদকসম্রাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় তাঁর প্রভাব অনেক বেশি। কয়েক দশক ধরে তিনি ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে তাঁর গ্রেপ্তার মেক্সিকোর মানুষদের অবাকই করেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যারিক গারল্যান্ড বলেন, ওই দুই ব্যক্তি বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও শক্তিশালী মাদক পাচার চক্রগুলোর একটির নেতা। তিনি বলেন, ‘ফেনটানাইল আমাদের দেশের জন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী মাদকসংশ্লিষ্ট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জনগণের মধ্যে এই বিষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী মাদক চক্রের প্রত্যেক নেতা, সদস্য ও সহযোগীকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এর আগে বিচার বিভাগ থামবেন না।’
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা বলছেন, সিনালোয়া কার্টেল যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় মাদক সরবরাহকারী চক্র। মার্কিন কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮-৪৫ বছর বয়সী নাগরিকদের মৃত্যুর এক বড় কারণ ফেনটানাইলের ব্যবহার।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা বলছেন, সিনালোয়া কার্টেল যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় মাদক সরবরাহকারী চক্র। মার্কিন কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮-৪৫ বছর বয়সী নাগরিকদের মৃত্যুর এক বড় কারণ মাদকদ্রব্য ফেনটানাইলের ব্যবহার।
যুক্তরাষ্ট্রের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ডিইএ) এল মায়োকে ধরিয়ে দিতে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
২০১৯ সালে এল চাপোর বিচার চলাকালে এল মায়োর বিরুদ্ধেও একটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, তিনি বিচারের সম্মুখীন হওয়া এড়িয়ে মুক্ত জীবন যাপন করার বিনিময়ে মেক্সিকো সরকারকে ঘুষ দেন। এল চাপোর আইনজীবী জেফরি লিচম্যান বিচারকদের বলেছিলেন, সত্যিকার অর্থে তিনি (এল চাপো) কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন না, করেন এল মায়ো।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, মাদক ছাড়াও মেক্সিকোয় বেশ কিছু বৈধ ব্যবসা রয়েছে এল মায়োর। এর মধ্যে দুগ্ধজাত পণ্যের প্রতিষ্ঠান, পরিবহন সেবা ও হোটেল ব্যবসা অন্যতম। এ ছাড়া আবাসন খাতের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর।
এল মায়োকে এখন বিশ্বের অন্যতম বড় মাদকসম্রাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় তাঁর প্রভাব অনেক বেশি। কয়েক দশক ধরে তিনি ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে তাঁর গ্রেপ্তার মেক্সিকোর মানুষদের অবাকই করেছে।
এল মায়ো কীভাবে গ্রেপ্তার হয়েছেন, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস ও এফবিআই কয়েক মাস ধরে তাঁকে গ্রেপ্তারে ওত পেতে ছিল। এরই অংশ হিসেবে সিনালোয়া কার্টেলের উচ্চপদস্থ এক সদস্যের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা হয় তাঁকে। সেই ফাঁদে পা দেন এল মায়ো।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এল চাপোর ছেলে লোপেজ গুজম্যান মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং এল মায়োকে ধরিয়ে দেন। এল চাপোকে গ্রেপ্তারের পেছনে এল মায়োর হাত ছিল বলে অভিযোগ ছিল লোপেজের।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ফাঁদ হিসেবে এল মায়োকে গ্রেপ্তার করার আগে মেক্সিকোয় কৌশলে একটি উড়োজাহাজে তোলা হয়। তাঁর ধারণা ছিল, তিনি সেখানকার একটি গোপন বিমানঘাঁটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন। কিন্তু উড়োজাহাজটি তাঁকে নিয়ে টেক্সাসে যায়। আর সেখানেই মার্কিন গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন তাঁকে।
১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে উত্থান সিনালোয়া কার্টেলের। এটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এল মায়ো। তবে চক্রটির সুপরিচিত মুখ ছিলেন এল চাপো। দুজনের মধ্যে এল চাপোকেই বেশি কুখ্যাত বলে ধরা হতো। অবশ্য অনেকেই বিশ্বাস করতেন, এল মায়ো-ই ছিলেন মাদক চক্রটির মূল হোতা।