নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে কমলা।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে জনসমর্থনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস। আগামী ৫ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেনসিলভানিয়াকে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এ অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। জরিপ বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইভথার্টিফাইভের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য জরিপ হিসেবে দেখা হয় নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের জরিপকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে জয়ী হওয়া এবং এর ১৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আর কোনো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে এত বেশি ইলেকটোরাল ভোট নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন, অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচনের মতো নয়। এতে সরাসরি জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট হিসেবে পরিচিত) প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। তাঁরা মূলত পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলীকে নির্বাচিত করেন। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামের এই নির্বাচকমণ্ডলী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট রয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট। আবার আলাস্কা, সাউথ ডাকোটা, ভারমন্টের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে ৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট।
নিউইয়র্ক টাইমস, ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়ারার ও সিয়েনা কলেজ জরিপে ৮৫৭ জন ভোটারের মতামত নিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, কমলা ৩ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপ করা হয়েছে ৭ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। এ জরিপ অনুযায়ী, কমলার সমর্থন ৫০ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৭ শতাংশ। তবে কমলা যে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন, তা জরিপের ৩ শতাংশ ত্রুটির সীমার মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া জরিপে ৩ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করেননি এবং তাঁদের অনেকে উত্তর দিতে রাজি হননি।
নারী ভোটারদের সমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। তাঁকে ৫৮ শতাংশ নারী সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের পক্ষে নারী ভোটারদের সমর্থন ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে কমলা। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে কমলার সমর্থন ৮১ শতাংশ আর ট্রাম্পের ১৬ শতাংশ।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ের অধিকাংশ জরিপে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে তাঁদের মধ্যে যে ব্যবধান দেখা যাচ্ছে, তা জরিপের ত্রুটির সীমার মধ্যেই থাকছে।
এদিকে ইমরাসন কলেজ ও দ্য হিল পেনসিলভানিয়ায় এক হাজার ভোটারের মধ্যে জরিপ করেছে। তাতে ট্রাম্প ১ পয়েন্টে এগিয়ে। এতে ট্রাম্পের সমর্থন ৪৯ শতাংশ আর কমলার ৪৮ শতাংশ। ৫ অক্টোবর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ জরিপ করা হয়।
সেন্টার ফর ওয়ার্কিং ক্লাস পলিটিকস ও ইউগভের করা এক জরিপে দেখা গেছে, কমলার সমর্থন সেখানে ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়। টাইমস–এর করা সামগ্রিক জরিপে দেখা গেছে, কমলার সমর্থন ৪৯ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৮ শতাংশ। ফাইভথার্টিফাইভের জরিপে দেখা গেছে, কমলার সমর্থন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৭ শতাংশ ৫ শতাংশ।
আগামী মাসের নির্বাচনে কমলাকে জিততে হলে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন হাতছাড়া করা চলবে না। এ তিন অঙ্গরাজ্য ডেমোক্র্যাটদের এলাকা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে যেতে হলে নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়ার সঙ্গে পেনসিলভানিয়ায় জিততে হবে। এর আগে ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে পেনসিলভানিয়ায় স্বল্প ব্যবধানে জিতেছিলেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালে তিনি বাইডেনের কাছে এখানে হেরে যান।
ইতিমধ্যে পেনসিলভানিয়ায় জিততে কমলা ও ট্রাম্প সেখানে ঘন ঘন সমাবেশ করছেন। এর আগে পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছিল। গত সপ্তাহে আবার সেখানে প্রচার করছেন ট্রাম্প। এর আগে এ সপ্তাহে কমলার পক্ষে প্রচার করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।