রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের কাছে রেখে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পর শনিবার প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আক্রমণ করে এদিন ট্রাম্প বলেন, তাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান কনভেনশনে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্বাচনী প্রচারণা ভন্ডুল করতে এসব ফৌজদারি অভিযোগ সাজিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, বাইডেনের ছেলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং কংগ্রেস থেকে যে তদন্তগুলো চলছে, সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
ট্রাম্পের অভিযোগগুলোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে তদন্তগুলো করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বাইডেন বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলা তদন্তের সঙ্গে জড়াবেন না।
কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৭টি অভিযোগ আনার কথা প্রকাশের এক দিন পর সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ভালোভাবে সামলাতে পারেননি। এর মধ্যে রাষ্ট্রের অত্যন্ত স্পর্শকাতর কিছু নথিও ছিল।
কৌঁসুলিদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং দেশটির ভেতর হামলা হওয়ার ঝুঁকিসংক্রান্ত নথিও ট্রাম্পের কাছে ছিল। অথচ এগুলো তাঁর কাছে রাখা ঠিক হয়নি।
৪৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, গোপনীয় নথি হাতে পাওয়ার এখতিয়ার নেই এমন ব্যক্তিদেরও ট্রাম্প গোপনীয় তথ্যগুলো জানিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের দুটো অভিযোগ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করার ঘটনা নজিরবিহীন। ট্রাম্পকে এমন সময়ে অভিযুক্ত করা হলো, যখন তিনি আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছেন।
শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ে যাবেন।
আগামী মঙ্গলবার মায়ামির আদালতে তাঁর প্রথমবারের মতো হাজিরা দেওয়ার কথা আছে। ৭৭তম জন্মদিনের এক দিন আগে তিনি আদালতে হাজির হবেন।
ট্রাম্প ও বাইডেন গোপনীয় নথিগুলো কীভাবে সামলেছেন, তা স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড দুজন ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ উপদেষ্টাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের বাড়ি থেকে এবং বাইডেনের সাবেক কার্যালয় থেকে গোপন নথি উদ্ধার হয়েছিল।
ট্রাম্প চান বাইডেনের বিরুদ্ধে যে ধরনের তদন্ত হবে, সে একই কায়দায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক। তবে আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটো ঘটনার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে।
বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি না, সে প্রসঙ্গে বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় কিছু বলেনি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলা মামলাটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।