যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিকারগ্রস্ত’ বললেন চীনা কূটনীতিক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন চীনা কূটনীতিক ওয়াং ই
ছবি: রয়টার্স

চীনা কূটনীতিক ওয়াং ইকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ওয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করার পর গতকাল শনিবার এক সাক্ষাৎকারে এই সতর্কবার্তা দেন ব্লিঙ্কেন। এর আগে ওয়াং ই বেলুনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র বিকারগ্রস্তের মতো আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেন।

ব্লিঙ্কেন বলেন, মস্কোকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করছে বেইজিং। আর এ নিয়ে সতর্ক রয়েছে ওয়াশিংটন।

জার্মানির মিউনিখে বিশ্ব নিরাপত্তা সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকে অজ্ঞাত একটি স্থানে দুজনের সাক্ষাৎ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে সন্দেহজনক চীনা গোয়েন্দা বেলুন ভূপাতিত করায় ওয়াশিংটনকে ‘বিকারগ্রস্ত’ বলে ক্ষোভ ঝাড়েন ওয়াং। এর কয়েক ঘণ্টা পর এই বৈঠক হয়।

চীনা বেলুনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ততা বেড়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বেইজিংয়ের অবস্থানের দিকে নজরদারি করছে পশ্চিমা দেশ। এ নিয়েও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে তিক্ততা রয়েছে।

গতকাল শনিবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকার যুক্তরাষ্ট্রে আজ রোববার সকালে এনবিসি নিউজে প্রচারিত হবে। সাক্ষাৎকারে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, চীন রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ দেওয়ার কথা ভাবছে। রাশিয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছে চীনের। চীনা কূটনীতিক ওয়াংকে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন এমনটা ঘটলে তাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, চীন রাশিয়ায় অনেক ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবছে। ওয়াশিংটন শিগগিরই এ ব্যাপারে আরও তথ্য জানাবে।

 সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, চীন শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কথা বলছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়াকে সমর্থন করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও বলেন, চীন রাশিয়াকে সহায়তা করার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকটা নীরব ছিলেন।

সম্মেলনের আগে ওয়াং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। ওয়াং বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে ঠান্ডা মাথায় যুদ্ধ শেষের উপায় ভাবতে হবে। তিনি আলোচনার জন্য আহ্বান জানান। ওয়াং নাম প্রকাশ না করে বলেন, কিছু শক্তি আলোচনা চায় না। তাঁরা দ্রুত যুদ্ধ শেষ হোক, তা চায় না।

এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্লিঙ্কেন বলেন, তিনি নমনীয়ভাবে ওয়াংকে বলেছেন এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত ছিল। এ রকম যেন আর না ঘটে। তবে ওয়াং কোনো ক্ষমা চাননি।

ওয়াশিংটনে ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের চীনা বিশেষজ্ঞ ক্রেইগ সিনগ্লেটন বলেন, ‘ব্লিঙ্কেন ও ওয়াংয়ের বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কে কোনো বদল আনবে না।  দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস নেই এটা স্পষ্ট।’

কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র তার আকাশে একটি ‘চীনা গুপ্তচর বেলুন’ শনাক্তের কথা জানায়। ৪ ফেব্রুয়ারি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বেলুনটি ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র। বেলুন-কাণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা দেখা দেয়, তা এখনো অব্যাহত।