উইসকনসিনে বক্তব্য দিচ্ছেন কমলা হ্যারিস, ৩০ অক্টোবর
উইসকনসিনে বক্তব্য দিচ্ছেন কমলা হ্যারিস, ৩০ অক্টোবর

ওবামাকেয়ার বাতিল চান ট্রাম্প, নারীদের নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন: কমলা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ভোটারদের সতর্ক করেছেন। কমলা বলেছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রে বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়ে চালু হওয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচিটি বাতিল করে দিতে পারেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন কমলা। তাঁর দাবি, বুধবারের সমাবেশে ট্রাম্প নারীদের নিয়েও আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন।

অ্যারিজোনা ও নেভাডার উদ্দেশে রওনা করার আগে উইসকনসিনের ম্যাডিসনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য কথা বলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এ সময় তিনি ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দেন যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর শাসনের মেয়াদে ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বাতিল করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিলেন।

কমলা হ্যারিসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কখনোই এ কর্মসূচি বাদ দিতে চাননি।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি কখনোই এমনটা করিনি, এমনকি কখনো এমনটা করার কথা ভাবিওনি।’

বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মূলত সাত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলই পুরো নির্বাচনের ফল ঠিক করে দিতে পারে।

অক্টোবরে রয়টার্স/ইপসোসের করা জরিপে দেখা গেছে, নারী-পুরুষভেদে ভোটারদের কাছে কমলা ও ট্রাম্পের সমর্থন আলাদা। নারী ভোটারদের সমর্থনের দিক থেকে কমলা ট্রাম্পের চেয়ে ১২ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। আর পুরুষ সমর্থকদের জায়গা থেকে ট্রাম্পের সমর্থন কমলার চেয়ে সাত শতাংশ বেশি।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশন ল্যাবের তথ্য অনুসারে, ৬ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে সশরীর কিংবা ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন।

২০১০ সালে চালু হওয়া অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্টের মধ্য দিয়ে দেশটির স্বাস্থ্য বিমা কর্মসূচির আওতায় প্রায় চার কোটি মার্কিন নাগরিককে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া হয়। ২০১০ সালে বিলটি যখন আইনে পরিণত হয়, তখন এটি ডেমোক্রেটিক দলের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ছিল। তবে এটি এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানোর সময় ট্রাম্প বারবারই ওবামাকেয়ার বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে এমন একটি প্রস্তাব পাসও হয়েছিল। ট্রাম্প তখন এ নিয়ে উদ্‌যাপন করতে প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যদের হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে উচ্চ কক্ষ সিনেটে প্রস্তাবটি পাস করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।  

যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ট্রাম্প বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন। এ দিন তিনি জোরালোভাবে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হলে নিঃসন্তানদের ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) চিকিৎসার অর্থ দিতে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেবেন।

এ দিকে গত বুধবার উইসকনসিনে ট্রাম্পের করা একটি মন্তব্য নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাচ্ছে। ওই সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘নারীরা পছন্দ করুক বা না করুক, আমি তাঁদের সুরক্ষা দেব। ক্রমাগত আসতে থাকা অভিবাসীদের হাত থেকে তাঁদের সুরক্ষা দেব।’

‘পছন্দ করুক বা না করুক’ এ কথাটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন কমলা হ্যারিস। তাঁর দাবি, এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প নারীদের হেয় করেছেন। তিনি বোঝাতে চাইছেন যে নারীরা নিজেদের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা রাখেন না এবং নিজেদের অধিকারের বিষয়গুলো বুঝতে পারেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নিউ মেক্সিকোতে প্রচারণা চালিয়েছেন। পরে তিনি নেভাডার উদ্দেশে রওনা করেন।  

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রচারণা চালানোর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প ও কমলা হিস্পানিক ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন।