পাঁচ বছর কারাগারে বন্দিজীবন কাটানোর পর নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। সেখানে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া উইকিলিকসের এই প্রতিষ্ঠাতা ‘চোখের সামনে দারুণ কিছু’ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘বাড়িতে আসতে পেরে সে দারুণ খুশি।’
অ্যাসাঞ্জ-স্টেলা দম্পতির দুই সন্তান। স্টেলা বলেন, অ্যাসাঞ্জের মুক্তির খবর বলার পর তারা আনন্দে লাফাতে শুরু করে। জুলিয়ানকে নিজেদের পোষা সিল দেখানোর অপেক্ষা করছিল তারা।
৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জকে বহন করা চার্টার্ড উড়োজাহাজ গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় রাতে ক্যানবেরায় পৌঁছায়।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির পর ভবিষ্যৎ জীবন কেমন করে কাটাবেন, সে বিষয়ে এখনো নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়নি বলে জানান স্টেলা। বলেন, ‘আমরা আমাদের একলা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাই।’
অ্যাসাঞ্জ-স্টেলা দম্পতির দুই সন্তান। স্টেলা বলেন, অ্যাসাঞ্জের মুক্তির খবর বলার পর তারা আনন্দে লাফাতে শুরু করে। জুলিয়ানকে নিজেদের পোষা সিল দেখানোর অপেক্ষা করছিল তারা।
‘জুলিয়ানকে নিতে আমি শুধু ব্যাগ গুছিয়ে উড়োজাহাজে উঠে এখানে এসেছি। এরপর কী হবে? আশা করি বিশ্রাম, নিজেকে ফিরে পাওয়া এবং খানিকটা সময় শান্তিতে কাটানো,’ বলেন স্টেলা।
২০১০ ও ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে তাঁর ফাঁস করা নথিগুলো বিশ্বকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এসবের কোনো কোনোটিতে মার্কিন সেনাদের হাতে বন্দী নির্যাতনের মতো ঘটনারও উল্লেখ ছিল।
এ ঘটনায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করে মার্কিন বিচার বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ থেকে বাঁচতে অ্যাসাঞ্জ সাত বছর লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে একটি ধর্ষণ মামলাও হয়েছিল।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের সুরক্ষিত বেলমার্শ কারাগারে পাঁচ বছর দুই মাস বন্দী ছিলেন। কারাগার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি।
অ্যাসাঞ্জের মুক্তির ঘটনা অবশ্য আইনি লড়াইয়ের ফসল নয়; বরং মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এসেছে। সমঝোতা অনুযায়ী, অ্যাসাঞ্জকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা ১৮ অভিযোগের সব কটিতে দোষ স্বীকার করতে হবে।
সমঝোতা অনুযায়ী গত সোমবার কারাগার থেকে ছাড়া পান অ্যাসাঞ্জ। এরপর তিনি প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন অঞ্চল নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডসে রওনা দেন। সেখানে একটি আদালতে গতকাল তিন ঘণ্টার শুনানি শেষে অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ওই দিনই অস্ট্রেলিয়ার পথে রওনা হন অ্যাসাঞ্জ। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি লড়াই শেষ হলো।