যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মেয়ে নাওমি বাইডেন। গতকাল শুক্রবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নাওমি বলেছেন, ২০১৮ সালে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার কয়েক সপ্তাহ আগেই তাঁর বাবা হান্টার মাদকাসক্তির চিকিৎসায় ভালোভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন।
হান্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালে উইলমিংটনের আগ্নেয়াস্ত্রের একটি দোকান থেকে তিনি একটি রিভলবার কিনেছিলেন। আগ্নেয়াস্ত্রটি নিজের কাছে রাখার অনুমতি চেয়ে সরকারি আবেদনপত্র পূরণ করার সময় তিনি নিজের মাদকাসক্তি নিয়ে তথ্য গোপন করেছেন। সে সময় মাদক (কোকেন) সেবনকারী থাকাবস্থাতেই তিনি ১১ দিন অবৈধভাবে নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রটি রেখেছিলেন। তবে হান্টার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
গতকাল ৩০ বছর বয়সী নাওমি আদালতকে বলেন, তিনি ওই সময় ক্যালিফোর্নিয়াতে তাঁর বাবাকে দেখেছেন। তাঁর অবস্থা তখন সত্যিই খুব ভালো বলে মনে হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় নাওমি তাঁর ফোন থেকে বাবাকে পাঠানো খুদে বার্তা ও কল করার তালিকা দেখান। সেগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে, তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
হান্টার আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার কয়েক দিন পর নাওমি তাঁর বাবাকে পাঠানো খুদে বার্তায় লিখেছিলেন, ‘আমি ভীষণভাবে তোমার শূন্যতা অনুভব করছি। আমি শুধু চাই, তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে।’
এর আগে কৌঁসুলিরা আদালতে বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে বলেন, ওই সময় হান্টার কোকেন কেনার চেষ্টা করছিলেন।
হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় গতকাল আদালতে জবানবন্দি দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষী ছিলেন নাওমি বাইডেন।
আগামী সোমবার পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতবি রেখেছেন আদালত। ওই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী জানাবেন যে ৫৪ বছর বয়সী হান্টার বাইডেন আদালতে জবানবন্দি দেবেন কি না।
হান্টার হলেন ফৌজদারি অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হওয়া প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সন্তান।
কয়েক দিন ধরে চলা এ বিচার কার্যক্রমে ইতিমধ্যে হান্টার বাইডেনের সাবেক স্ত্রী, সাবেক প্রেমিকা ও ভাইয়ের স্ত্রী তাঁর কোকেন ব্যবহারের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার হান্টার বাইডেনের ভাইয়ের স্ত্রী হ্যালি বাইডেন বলেন, হান্টার ও তাঁর সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রটি সরিয়ে ফেলেছিলেন।
কৌঁসুলিদের অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার কয়েক সপ্তাহ আগে ও পরে হান্টার বাইডেন যে কোকেন ব্যবহার করছিলেন, সে বিষয়ে অনেক প্রমাণ আছে। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার জন্য সরকারি আবেদনের ফরম পূরণ করার সময় মাদকাসক্তের ঘরে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাবে লোয়েল বলেছেন, হান্টার বাইডেনের প্রতারণার ইচ্ছে ছিল না। কারণ, আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার সময় তিনি নিজেকে মাদকাসক্ত হিসেবে বিবেচনা করতেন না। ২০২৩ সালে এক শুনানিতে হান্টার বাইডেন বিচারককে বলেছিলেন, তিনি ২০১৯ সাল থেকে সংযত আছেন।
বৃহস্পতিবার এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি তাঁর ছেলেকে ক্ষমা করবেন না।
হান্টারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, তাতে তাঁর ১৫ থেকে ২১ মাস পর্যন্ত সাজা হওয়ার সুযোগ আছে। তবে আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই ধরনের মামলায় প্রায়ই সাজার মেয়াদ কম হতে দেখা যায়। বিচারপূর্ব মুক্তির শর্তগুলো মেনে চললে কারাগারেও থাকতে হয় না।