মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানানো কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আর তাঁর প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচন সামনে রেখে গত মাসের শেষ দিকে বাইডেন ও ট্রাম্প প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে হওয়া এই বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ হন ৮১ বছর বয়সী বাইডেন।
মূলত এই বিতর্কের পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বাইডেনের ওপর নিজ দলের ভেতর থেকে চাপ বাড়ছে। তবে বাইডেন এখন পর্যন্ত নির্বাচন করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে আছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ইতিমধ্যে বাইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে অস্বস্তি-শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দলের কেউ কেউ অবশ্য তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিচ্ছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির যেসব আইনপ্রণেতা প্রকাশ্যে, সরাসরি বাইডেনকে আবার নির্বাচন না করার আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা হলেন–
সিনেটর পিটার ওয়েলচ
ভারমন্টের সিনেটর পিটার ওয়েলচ ওয়াশিংটন পোস্টে একটি মতামত লিখেছেন। মতামতে পিটার বলেছেন, দেশের ভালোর জন্য তিনি বাইডেনকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। পিটার প্রথম কোনো ডেমোক্র্যাট সিনেটর, যিনি বাইডেনকে প্রকাশ্যে সরে দাঁড়াতে বলেছেন।
প্রতিনিধি প্যাট রায়ান
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য প্যাট রায়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, বাইডেন একজন দেশপ্রেমিক। কিন্তু ট্রাম্পকে হারানোর জন্য তিনি আর দলের সেরা প্রার্থী নন। দেশের ভালোর জন্য বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে বলছেন তিনি।
প্রতিনিধি মিকি শেরিল
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য মিকি শেরিল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাইডেন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন। তাই তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার বিষয়ে ঘোষণা দেবেন বলে তাঁর প্রত্যাশা। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাইডেন নতুন দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিনিধি অ্যাডাম স্মিথ
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য অ্যাডাম স্মিথ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাইডেনের উচিত তাঁর প্রার্থিতার ইতি টানা। দলকে নতুন প্রার্থী মনোনীত করার ব্যাপারে সুযোগ দেওয়া। ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স ছিল উদ্বেগজনক। মার্কিন জনগণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁরা আর বাইডেনকে আরও চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে একজন বিশ্বাসযোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখছেন না। বিতর্কের পর ওঠা এসব উদ্বেগ বাইডেন গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।
প্রতিনিধি লয়েড ডগগেট
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য লয়েড ডগগেট প্রকাশ্যে বাইডেনকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। এক বিবৃতিতে লয়েড বলেন, তিনি আশা করেছিলেন, বিতর্কটি হয়তো পরিস্থিতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কিছুটা গতি এনে দেবে, কিন্তু তা হয়নি।
প্রতিনিধি রাউল গ্রিজালভা
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য রাউল গ্রিজালভা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ করার সময় এসেছে। তারপরও যদি বাইডেন নির্বাচনে লড়েন, তাহলে তিনি তাঁকে সমর্থন দেবেন। তবে তিনি মনে করেন, ভিন্ন কাউকে দলীয় প্রার্থী করার একটা সুযোগ এখনো আছে।
প্রতিনিধি সেথ মল্টন
ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য সেথ মল্টন দেশের সেবায় বাইডেনের অবদানের প্রশংসা করেন। তবে তিনি স্থানীয় রেডিও শোতে বলেছেন, বাইডেনের উচিত জর্জ ওয়াশিংটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। নতুন নেতাদের সামনে আসতে দেওয়া। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নতুন কোনো নেতাকে লড়তে দেওয়া। এ জন্য তাঁর উচিত সরে যাওয়া।
প্রতিনিধি মাইক কুইগলি
ইলিনয় থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মাইক কুইগলি বলেছেন, বাইডেনকে অবশ্যই সরে দাঁড়াতে হবে। অন্য কাউকে নির্বাচন করতে দিতে হবে। তা না হলে বিপর্যয়ের ঝুঁকি আছে।
প্রতিনিধি অ্যাঞ্জি ক্রেগ
প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য অ্যাঞ্জি ক্রেগ প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, বিতর্কের সময় যা দেখেছেন, প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে যা শুনেছেন, তার আলোকে তাঁর অবস্থান হলো, বাইডেন কার্যকরভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর এটাও মনে হয় না যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেন জয়লাভ করতে পারবেন।
প্রতিনিধি আর্ল ব্লুমেনার
প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আর্ল ব্লুমেনার বলেছেন, দেশের সামনে প্রশ্ন হলো, বাইডেনের আর মাঠে থাকা উচিত কি না। এই প্রশ্নের সঙ্গে শুধু বাইডেনের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি জড়িত নয়। বরং প্রশ্নটি মার্কিন গণতন্ত্র রক্ষার সঙ্গেও যুক্ত। তিনি আশা করেন, বাইডেন এ সিদ্ধান্তে আসবেন যে তাঁর আর ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া উচিত নয়।