সন্তানের জন্ম দেওয়াটা তাঁর কাছে এতটাই আনন্দের যে মা হওয়াটা তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য তিনি তাঁর গর্ভ ভাড়া দেন। তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে আটলান্টার ইয়েসিনিয়া লাতোরে।
২৬ বছর বয়সী তরুণী ইয়েসিনিয়া ইতিমধ্যে তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি সন্তান তাঁর নিজের। আরেকটি সন্তান তিনি অন্য দম্পতির হয়ে গর্ভ ভাড়া (সারোগেট) দিয়ে জন্ম দিয়েছেন। গর্ভ ভাড়া দেওয়া বাবদ তিনি প্রায় ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯০৪ টাকা (৪০ হাজার মার্কিন ডলার) ফি নেন।
যাঁরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মা হতে পারেন না, এমন নারীদেরই কেবল গর্ভ ভাড়া দিয়ে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা ইয়েসিনিয়ার। তিনি বলেন, ‘আমি শিগগির আবার সারোগেট মা হওয়ার পরিকল্পনা করছি। এ জন্য আমার আর তর সইছে না।’
ইয়েসিনিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকেও বেশ জনপ্রিয়। এখানে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৭০০। তিনি টিকটকে তাঁর এই মা হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা অকপটে শেয়ার করেছেন। এ কারণে সারোগেটের মাধ্যমে হতে চাওয়া সম্ভাব্য মা-বাবাদের যাঁরা অনলাইনে আছেন, তাঁদের কাছেও তিনি বেশ পরিচিত।
কীভাবে সারোগেট পদ্ধতিতে মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা যায়, তা জানতে শতাধিক দম্পতি যোগাযোগ করেছেন ইয়েসিনিয়ার সঙ্গে। গর্ভ ভাড়া দেওয়া বাবদ ৪০ হাজার ডলার নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ বুঝতে পেরেছে, সারোগেসি মানে শুধু অর্থ উপার্জন নয়, পারিবারিক জীবন পরিবর্তন করে দেওয়া একটা অমূল্য বিষয়। এটাই আমি করছি। আর এ ক্ষেত্রে অর্থ একটি বোনাসমাত্র। পরিবার আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি যা করছি, তার জন্য গর্বিত।’
২০১৭ সালে ইয়েসিনিয়ার প্রথম সন্তান টাইসনের জন্ম হয়। এর পর থেকেই তিনি গর্ভধারণের সময়কার অভিজ্ঞতার নেশায় পড়ে যান। ইয়েসিনিয়া বলেন, ‘আমি গর্ভাবস্থার সবকিছুর প্রেমে পড়েছি। আমি বেবি বাম্প, নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ও পেটে শিশুর নড়াচড়াটা বেশ উপভোগ করি। ছেলে হওয়ার পর পরিবার নিয়ে আমি খুশি। কিন্তু আমি আবারও সন্তান জন্ম দিতে চাই।’
২০১৮ সালে গর্ভধারণের পাঁচ সপ্তাহ পর ইয়েসিনিয়া গর্ভপাতের শিকার হন। এই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা তাঁকে অন্যদের জন্য (যাঁরা সন্তান নিতে চান, কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মা হতে পারেন না) সারোগেট মা হতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
আমি গর্ভাবস্থার সবকিছুর প্রেমে পড়েছি। আমি বেবি বাম্প, নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ও পেটে শিশুর নড়াচড়াটা বেশ উপভোগ করি। ছেলে হওয়ার পর পরিবার নিয়ে আমি খুশি। কিন্তু আমি আবারও সন্তান জন্ম দিতে চাই।ইয়েসিনিয়া লাতোরে
এ বিষয়ে মার্কিন এই তরুণী বলেন, একবার গর্ভপাত হওয়ার কারণে আমি গর্ভ ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করি। গর্ভপাতের সময়টা আমার জন্য চরম দুঃসময় ছিল। এটা আমার জীবনকে চিরদিনের জন্য বদলে দিয়েছে। সে সময় খুব আশাহত হয়েছিলাম। অনেক মানুষ গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাঁদের কথা ভেবে একই সঙ্গে আগে একটি সন্তানের জন্ম দেওয়ার কারণে কৃতজ্ঞও ছিলাম।’
২০১৯ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় ছেলে সন্তান ট্রে জুনিয়রের জন্ম দেন ইয়েসিনিয়া। এরপর আবারও অন্তঃসত্ত্বা হতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে বুকের দুধ খাওয়ানো পর্ব শেষ হওয়ার পর আমি অন্য কোনো পরিবারকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। এমন একটি পরিবারের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম, যারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় এবং ভবিষ্যতে শিশুটিকে দেখতে দেবে, এটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি এমন এক মাকেও সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, যার কোনো সন্তান নেই।’
ইয়েসিনিয়া বলেন, তিনি একটি সারোগেসি এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে তাঁর প্রথম সারোগেসি প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ স্থানান্তরের আগে তিনি মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন, মেডিকেল স্ক্রিনিং, আলট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা শেষে এক মাসের ওষুধ সেবন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতি সবার সমর্থন আছে। সবাই শেষ পর্যন্ত আমাকে নিয়ে গর্বিত।’
সারোগেসির মাধ্যমে যাঁরা মা হতে চান, তাঁরা সাধারণ গর্ভ ভাড়া বাবদ প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬০ থেকে ২ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৫২০ টাকা (১ লাখ থেকে ২ লাখ ডলার) দিয়ে থাকেন। কিন্তু ওষুধ, ভ্রূণ স্থানান্তর ও মাতৃত্বকালীন পোশাকের ভাতা ছাড়া প্রথমবার গর্ভ ভাড়া দিয়ে ইয়েসিনিয়া নিয়েছেন প্রায় ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯০৪ টাকা (৪০ হাজার ডলার)।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সারোগেসির মাধ্যমে প্রথম একটি সুস্থ ছেলেশিশুর জন্ম দিয়েছেন ইয়েসিনিয়া। তিনি বলেন, ‘ওই পরিবারকে তাঁদের সন্তান দিয়ে দেওয়াটা আমার জন্য কঠিন ছিল না। তাঁদের জন্য কিছু করতে পেরে আমি আনন্দিত। ভবিষ্যতে ওই শিশুকে আমি দেখতে পারব। প্রতি সপ্তাহে ওই শিশুর মা তার ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়ে দেন। এটা সত্যিই আমাকে আনন্দিত করছে।’