কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প বা কমলাকে ভোট দেওয়ার আগে কী ভাবছেন মার্কিনরা

আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিভিন্ন জরিপে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে পারেন, কোন কারণে কাকে বেছে নিচ্ছেন ভোটাররা; বিশেষ করে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় ভোটাররা কী ভাবছেন, তা তুলে ধরেছে এএফপি।

নেভাদায় হতাশা

নেভাদা অঙ্গরাজ্যের ডায়ের শহরের ৬২ বছর বয়সী কর্মজীবী লেটিসিয়া চাপারো। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি এখনো অনেক দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন। এমনকি ভবিষ্যৎ নিয়েও তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ।

লেটিসিয়া বলেন, ‘সবার জন্য উন্নত জীবন চাই আমি। কারণ, আমি আমার সন্তানদের কী হবে, ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সত্যি ভীত। নতুন প্রজন্মের জন্য আমার দুঃখ হয়।’

গোল্ডফিল্ড শহরের স্ট্যাম্প ডিলার প্রবীণ নাদিয়া বিকুন এবারের প্রার্থীদের নিয়ে হতাশ। তারপরও তিনি আশা করেন, মানুষজন ‘একসঙ্গে কাজ’ শুরু করবে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার কোনো প্রার্থীকে পছন্দ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হয়তো মন্দের ভালোকে বেছে নিতে হবে। এবং সেটা কে হবে, তা এখনো আমি জানি না।’

অ্যারিজোনায় গর্ভপাত ও পণ্যের উচ্চ মূল্য

১৮ বছরের মেডিকেল শিক্ষার্থী ম্যাডেলিন টেনা স্পষ্টই জানিয়েছেন, তাঁর ভোট যাবে কমলা হ্যারিসের পক্ষে। লাতিন আমেরিকার এই তরুণী বলেন, নারী অধিকার তাঁর কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ম্যাডেলিন বলেন, ‘আমি নারী অধিকার, বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা ইতিমধ্যে আমাদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা আর কী কেড়ে নিতে পারে? এরপর কী?’

ম্যাডেলিন বলছিলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি যা দেখেছি, তার ওপর ভিত্তি করে আমি কমলাকে ভোট দেব। কারণ, ট্রাম্পের চেয়ে কমলা অনেক ভালো। তিনি ট্রাম্পের তুলনায় ভালো পড়াশোনা জানা এবং দেখতেও ভালো। ট্রাম্পকে মাঝে মাঝে শিশুসুলভ মনে হয়।’

স্নাতকের শিক্ষার্থী উইটনি ব্রাউনের কথায়ও ম্যাডেলিনের সুর। ৩৫ বছর বয়সী আফ্রিকান–আমেরিকান এই নারী বলেন, তিনি কাকে ভোট দেবেন, তা নির্ভর করবে গর্ভপাতের অধিকারের ওপর। সুতরাং তিনি কমলাকেই ভোট দেবেন।

উইটনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে আছে, একজন ১১ বছরের, অন্যজন ১৩ বছরের। আমি চাই, তারা যখন বড় হবে তখন তাদের শরীরের ওপর শুধু নিজেদের অধিকার থাকবে।’

অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ড্রিও রোবি জিনিসপত্রের উচ্চ মূল্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সম্ভবত তিনি ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। তবে সাবেক প্রেসিডেন্টের কট্টরপন্থী কিছু সমর্থককে নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে।

২১ বছর বয়সী এই আফ্রিকান–আমেরিকান তরুণী বলেন, ‘এই প্রথম আমি ভোট দিতে যাচ্ছি। কিন্তু আমি সত্যি তেমন উৎসাহ পাচ্ছি না।’

ড্রিও বলেন, ‘আমি সম্ভবত ট্রাম্পের দিকে যাব। কারণ, চার বছর ধরে দেখেছি, দেশ কীভাবে চলেছে। এবং সত্যি হলো, ট্রাম্পের সময় দেশের পরিস্থিতি বর্তমানের তুলনায় ভালো ছিল।’

ড্রিও আরও বলেন, ‘এখন জীবন খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বাড়িভাড়া, মুদি খরচ, গ্যাসের বিল দেওয়ার পর নিজের জন্য আর কিছু থাকে না। আমি দেশের ভেতর ঘৃণা ও বর্ণবাদ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন।’

এই তরুণী আরও বলেন, ‘আমাকে কমলা বা ট্রাম্পের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে। তাই আমি তাঁর (ট্রাম্প) নীতির পক্ষে। কিন্তু ট্রাম্পের কিছু উন্মত্ত সমর্থক আছে, যারা এই নীতিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।’

মিশিগানে অভিবাসন

মিশিগানের স্টারলিং হাইটসের বাসিন্দা ব্রেন্ডা অ্যাডমস। ৫৩ বছর বয়সী এই নারী একজন হাসপাতালকর্মী এবং বেকারিতে খণ্ডকালীন কাজ করেন। চার বছর আগে ডেমোক্র্যাট থেকে রিপাবলিকান শিবিরে যোগ দেওয়া এই নারী এবার ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

ব্রেন্ডা বলেন, ‘সীমান্তে টহল ও মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে অনেক কিছু করতে হবে। গত চার বছরে কোনো কিছুর তেমন পরিবর্তন হয়নি। দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাই আশা করছি, এ বছর হয়তো আমরা কিছু পার্থক্য আনতে পারব। আশা করছি, খাদ্য, মুদি, গ্যাসসহ সবকিছুর দাম কমে হাতের নাগালে আসবে।’

নর্থ ক্যারোলাইনায় ‘যেটা সঠিক, সেটা করুন’

পাহাড় ঘেরা ছোট্ট শহর সোয়ানানোয়া। সম্প্রতি হারিকেনের আঘাতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরটি। সেখানকার ষাটোর্ধ্ব শেলি হিউস বলেন, ট্রাম্পকে নিয়ে তাঁর কিছু দ্বিধা আছে। তারপরও এখন পর্যন্ত তাঁকেই ভোট দেবেন বলেন মনস্থির করে রেখেছেন।

শেলি বলেন, ‘অতীতে তিনি অনেক কিছু (আক্রমণাত্মক) করেছেন, যা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। এমনকি তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়েও মাথাব্যথা নেই। আমার মনে হয়, তিনি এবার ভালো কিছু করবেন।’

শেলি বলেন, ‘আমার সব সময় মনে হয়, সরকারের অন্যরা যা–ই বলুক না কেন, তার তোয়াক্কা না করে যেটা সঠিক, ট্রাম্প সেটাই করবেন। তিনি কোনো পুতুল নন।’