লস অ্যাঞ্জেলেসের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী

‘একজন মেশিনগান হাতে নিয়ে ঘুরছিলেন’

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার পর ঘটনাস্থল ঘিরে পুলিশের সতর্ক পাহারা। গতকাল দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের মনটেরি পার্ক শহরের গারফিল্ড অ্যাভিনিউ এলাকায়।
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে মনটেরে পার্ক নামের একটি শহরে বন্দুক হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। মনটেরে পার্কের অবস্থান লস অ্যাঞ্জেলেসের কিছুটা পূর্বে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ বিভাগ বলেছে, স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে বলরুমে নাচের একটি অনুষ্ঠানস্থলে এ ঘটনা ঘটে। সন্দেহভাজন বন্দুকধারী পালিয়ে গেছেন।

চীনা নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে মনটেরে পার্কে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ঘটনাস্থলের নিকটস্থ একটি রেস্তোরাঁর মালিকের বরাতে জানিয়েছে, তাঁর রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেওয়া লোকজন তাঁকে বলেছেন, মেশিনগান হাতে নিয়ে এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তাঁরা।

রোববার সকালে পুলিশ জানায়, সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় বন্দুকধারীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুক হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।

মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চীনা নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে মনটেরে পার্কে জড়ো হয়েছিলেন লোকজন। সেখানে স্থানীয় সময় রাত ১০টার পর বন্দুক হামলা হয়। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ওই শহরের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা গেছে, জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা আহত ব্যক্তিদের স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছেন। ঘটনাস্থল পুলিশ ঘিরে রেখেছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কন্ট্রোলার কেনেথ মেজিয়া টুইট করে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী শহর মনটেরে পার্কে যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা।

এদিকে বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ বিভাগ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে গুলি’ বলে বর্ণনা করেছে। তবে গুলিতে কতজন নিহত ও আহত হয়েছেন, তারা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি। হামলার প্রত্যক্ষদর্শী একজন স্থানীয় সংবাদপত্র লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেন, হামলার ঘটনায় সময় হঠাৎ করে তিন ব্যক্তি দৌড়াতে দৌড়াতে তাঁর রেস্তোরাঁয় ঢোকেন। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ওই ব্যক্তিকে রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন।

হামলাকারী ব্যক্তি একজন পুরুষ বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ বিভাগ। তবে হামলাকারী এখনো পলাতক। হামলার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় প্রকাশ হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শহরজুড়ে বহু পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

গোলাগুলিতে আহত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মনটেরি পার্কে।

যেখানে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে, এক দিন আগেই সেখানে চীনা নতুন চান্দ্রবর্ষ উদ্‌যাপনে সমবেত হয়েছিলেন হাজার হাজার এশিয়ান-আমেরিকান নাগরিক। সরকারি হিসাবে, মনটেরে পার্কের বাসিন্দা আনুমানিক ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই এশিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান ও ২৭ শতাংশ হিস্পানিক বা লাতিন। মনটেরে পার্কই যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র শহরে, যেখানে এশিয়ান বংশোদ্ভূতরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। চীন, তাইওয়ান, জাপান ও ভিয়েতনাম থেকে সেখানে আবাস গড়েন তাঁরা।

শেরিফ বিভাগের ক্যাপ্টেন অ্যান্ড্রু মায়ারের বরাতে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস জানায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন ওই এলাকায় মানুষের চিৎকার শুনতে পায়। জরুরি বিভাগের কর্মীরা এরপর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে শুরু করেন। পুলিশ কর্মকর্তা দ্রুত বলরুমের দিকে ছোটেন। সন্দেহভাজন হামলাকারী ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে শনাক্ত করার কোনো বর্ণনা পাননি। হামলার তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তাই এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এজেন্টদের পাশাপাশি অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যুরো থেকে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা করা হচ্ছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ওং ওয়েই লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেছেন, তাঁর এক বন্ধু বন্দুক হামলার সময় ওই ক্লাবে ছিলেন। যখন গুলির ঘটনা ঘটেছিল, তখন তিনি বাথরুমে ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি একজন বন্দুকধারী ও তিনটি মরদেহ দেখতে পান। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ ছিলেন। ওই ব্যক্তি ক্লাবটির মালিক হতে পারেন। পরে তাঁর বন্ধু রাত ১১টার দিকে পালিয়ে আসেন। তাঁর বন্ধুর ভাষ্য, বন্দুকধারী নির্বিচার গুলি করেছেন। তবে কেন গুলি করেছেন, তা তিনি জানেন না।

লস অ্যাঞ্জেলেসের এ ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক মাসেই পঞ্চমবারের মতো বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটল। টেক্সাসের উভালদে গত মে মাসে একটি স্কুলে বন্দুক হামলায় ২১ জন নিহত হওয়ার পর সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা এটি। এর আগে গত নভেম্বরে কলোরাডোর একটি নাইটক্লাবে বন্দুক হামলার ঘটনায় পাঁচজন নিহতের ঘটনা ঘটেছিল।