কমলা হ্যারিস ও তাঁর স্বামী ডগ এমহফ
কমলা হ্যারিস ও তাঁর স্বামী ডগ এমহফ

কমলা হ্যারিসের স্বামীসহ আপনজনেরা কে কী করেন

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে। ইতিমধ্যে নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন তিনি। কমলা এখন ভোটারদের কাছে নিজেকে নতুন করে পরিচয় করাচ্ছেন। কেননা, নিজের পাশাপাশি তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়েও অনেকের রয়েছে কৌতূহল।

কমলার পরিবারে কে কে আছেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন, কে কী করেন, সে সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক।

স্বামী ডগ এমহফ

কমলা হ্যারিসের স্বামী ডগ এমহফ একজন আইনজীবী। লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা এমহফ বিনোদনজগতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন। কমলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ২০১৩ সালে। পরের বছর কমলা ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল। পরে দুজন বিয়ে করেন। তখন থেকেই সব সময় স্ত্রীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ৫৯ বছর বয়সী এমহফ। কমলার রাজনৈতিক উত্থানেও পাশে থেকেছেন তিনি।

২০২০ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় নারী হিসেবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন কমলা হ্যারিস। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী হিসেবে এমহফও ইতিহাসে নাম লেখান। শুধু তা–ই নয়, তিনিই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জীবনসঙ্গী, যিনি একজন ইহুদি।

ওই বছর সেকেন্ড জেন্টেলম্যান (মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী) হিসেবে পুরোপুরি ভূমিকা পালনের জন্য এমহফ তাঁর আইনি প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যান। এখন ডেমোক্রটিক পার্টিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিসের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রতিনিধি বলে মনে করা হয় তাঁকে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন স্ত্রীর পক্ষে আবারও জোরালোভাবে এমহফকে কথা বলতে দেখা গেছে। সেদিন এমহফ বলেন, ‘ও সব সময় সন্তানদের পাশে থাকে এবং আমি জানি, ও আপনাদেরও পাশে থাকবে।’

দুই সৎসন্তান

কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিয়ের আগে এমহফের আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। তিনি ও তাঁর সাবেক স্ত্রী কেরস্টিনের দুটি সন্তান আছে। তাঁদের নাম কোল ও এলা। এমহফের সঙ্গে বিয়ের পর নিঃসন্তান কমলা তাঁদের মা হয়ে ওঠেন।

কমলা প্রায়ই বলে থাকেন, তাঁকে যেসব নামে সম্বোধন করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের ডাক হলো ‘মমালা’। সৎসন্তান কোল ও এলা তাঁকে এ নামেই ডেকে থাকেন। বর্তমানে কোলের বয়স ৩০ ও এলার ২৫ বছর। তাঁরা দুই ভাই–বোনও কমলাকে দারুণভাবে সমর্থন করেন।

২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন চলার সময় কমলা সম্পর্কে এলা বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার সৎমা।’ কমলার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমাদের বাবার জন্যই নন, আমাদের বিশাল ও মিশ্র পরিবারের তিন প্রজন্মের জন্য আপনি দারুণ একজন মানুষ।’

২০১৭ সালে কলোরাডো কলেজ থেকে স্নাতক করেন কোল। বাবার পথ অনুসরণ করে তিনিও বিনোদনজগতে পা রাখেন। শুরুতে তিনি ট্যালেন্ট এজেন্সি ডব্লিউএমইতে কাজ করেন। পরে হলিউড অভিনেতা ব্র্যাড পিটের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্ল্যান বিতে যোগ দেন।

এলা নিউইয়র্ক সিটির পারসনস স্কুল অব ডিজাইন থেকে স্নাতক করেছেন। ২০২১ সালে তিনি আইএমজি মডেলসের সঙ্গে চুক্তিভুক্ত হন। ব্যালেন্সিয়াগা ও প্রোয়েনজা শোলারের মতো ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর শোতে অংশ নিয়েছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রতিদিনই উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে কোল ও এলাকে।

স্বামী ও দুই সন্তানের সঙ্গে কমলা হ্যারিস

এমহফের সাবেক স্ত্রী কেরস্টিন

কোল ও এলার মা কেরস্টিনও কমলা সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলে থাকেন। সম্প্রতি কমলাকে ‘নিঃসন্তান নারী’ উল্লেখ করে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্সের একটি মন্তব্য ছড়িয়ে পড়লে এর বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন কেরস্টিন।

তখন সিএনএনকে পাঠানো এক বিবৃতিতে কেরস্টিন বলেছিলেন, ‘কোল ও এলার কিশোর বয়স থেকে গত ১০ বছর (এমহফের সঙ্গে বিচ্ছেদ–পরবর্তী সময়ে) আমি এবং ডগের পাশাপাশি কমলাও তাদের মায়ের ভূমিকা পালন করছেন। তিনি স্নেহশীল, লালনপালনকারী, অত্যন্ত যত্নশীল ও সব সময় পাশে থাকেন। আমি আমাদের এই মিশ্র পরিবারকে ভালোবাসি এবং তাঁকে এখানে পেয়ে কৃতজ্ঞ। ’

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রিটিবার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেরস্টিনও ২০২০ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় কমলাকে সৃজনশীল নানা পরামর্শ দিয়েছিলেন।

বোন মায়া হ্যারিস

একমাত্র ও ছোট বোন মায়া হ্যারিসের সঙ্গে কমলার সম্পর্ক বেশ গভীর বলে অনেকেরই জানা। তাঁদের মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর মা শ্যামলা গোপালান হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কেলেতে একাই তাঁদের দুই বোনকে (কমলা ও মায়া) লালনপালন করেছেন।

বড় বোনের মতো মায়াও আইন পেশা বেছে নিয়েছেন। ১৯৯২ সালে তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ল স্কুল থেকে স্নাতক করেছেন। ২০০৬ সালে নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) নির্বাহী পরিচালক হন তিনি।

৫৭ বছর বয়সী মায়া ধীরে ধীরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকালে তিনি হিলারি ক্লিনটনের নীতিমালা–বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার চেষ্টাকালে তাঁর প্রচার শিবিরের চেয়ারপারসন হিসেবেও কাজ করেছেন মায়া।

বোনের মেয়ে মিনা হ্যারিস

মায়ার একমাত্র সন্তান মিনাও মা ও খালার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কমলার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তাঁকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন মিনা। তিনি উবার ও ফেসবুকের মতো সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।

দুই সন্তানের মা মিনা ২০১৭ সালের শুরুতে ফেনোমেনাল নামে একটি মিডিয়া ও মার্চেন্ডাইজিং প্রতিষ্ঠান চালু করেন। নারী ও অন্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নেতৃত্বাধীন প্রকল্পগুলো গুরুত্ব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখনো কোনো না কোনোভাবে মিনার কর্মজীবন তাঁর খালার সঙ্গে যুক্ত। ২০২০ সালের জুনে তিনি তাঁর খালা ও মাকে নিয়ে একটি শিশুতোষ বই রচনা করেন। এটির নাম ‘কমলা অ্যান্ড মায়া’স বিগ আইডিয়া’।

কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তাঁর মা শ্যামলা গোপালান

ভগ্নিপতি টনি ওয়েস্ট

কমলার বোন মায়ার দ্বিতীয় স্বামী ও মিনার সৎবাবা টনি ওয়েস্ট। তিনিও একজন আইনজীবী। স্ট্যানফোর্ড থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক করেছেন তিনি। সেখানেই মায়া ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে পরিচয় টনির। টনি সরকারি ও বেসরকারি খাতে উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত ছিলেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে তিনি সহযোগী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। পেপসিকোর জেনারেল কাউন্সেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

টনি ওয়েস্ট এখন উবারের প্রধান আইন কর্মকর্তা। কমলার নির্বাচনী প্রচার শিবিরেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা তিনি।

মা শ্যামলা গোপালান

কমলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তা দেখে যেতে পারেননি মা শ্যামলা গোপালান। কমলা ও মায়ার বক্তব্য অনুযায়ী, বিজ্ঞানী মা ছিলেন তাঁদের দুজনের অনুপ্রেরণা।

২০২২ সালে এক ফেসবুক পোস্টে কমলা লিখেছিলেন, ‘আমার মা-ই প্রথম মানুষ, যিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মা প্রায়ই বলতেন, “কমলা, হয়তো অনেক কাজই তোমাকে প্রথম করতে হবে। এটা নিশ্চিত করবে, তুমি যেন শেষ ব্যক্তিটি না হও।”’

১৯ বছর বয়সে বিজ্ঞানী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন শ্যামলা গোপালান। তিনি স্তন ক্যানসার–বিষয়ক গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। নাগরিক অধিকারবিষয়ক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও জ্যামাইকার নাগরিক ডোনাল্ড হ্যারিসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে ডোনাল্ডকে বিয়ে করেন। কমলা তাঁকে ও মায়াকে লালনপালনের জন্য মা শ্যামলাকে কৃতিত্ব দিয়ে এলেও বাবার সঙ্গে তাঁদের বর্তমান সম্পর্ক কেমন, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেন না। ২০০৯ সালে শ্যামলা গোপালান মারা যান।