যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে গতকাল শুক্রবার এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেন জো বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে গতকাল শুক্রবার এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য দেন জো বাইডেন

ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের পর বাইডেনের বিকল্প নিয়ে আলোচনা

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে বিতর্কে বিপর্যয়ের পর জো বাইডেনকে নিয়ে নাখোশ তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকে। ৮১ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে টিকতে পারবেন কি না, দলের ভেতরে এমন প্রশ্ন উঠছে। দলের অনেকে প্রেসিডেন্ট পদে বিকল্প প্রার্থীর কথাও বলছেন। এমনকি নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতো প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক বাইডেনকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে ওই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কে মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছিলেন বেশ নিষ্প্রভ। উদ্যত ট্রাম্পের বাক্যবাণে প্রথম দিকে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। বাইডেন যে বিতর্কে ভালো করেননি, তা স্বীকার করেছেন তাঁর দলের সদস্যরাও।

সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্কের মঞ্চে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিতর্কে ভালো না করার কথা স্বীকার করেছেন বাইডেনও। নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে গতকাল শুক্রবার এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমি আর তরুণ নই। আগের মতো সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি না। তবে যদি মন থেকে বিশ্বাস করতাম প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগুলো আমি পালন করতে পারব না, তাহলে এই পদের জন্য আবার নির্বাচনে প্রার্থী হতাম না।’

বাইডেনের এ বক্তব্যের অর্থ হলো তিনি প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তবে তাঁর বিকল্প নিয়ে দলে আলোচনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্য হাকিম জেফরিসকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। তবে সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘নভেম্বরে পার্লামেন্ট আবার নিজেদের দখলে নিতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব।’

বিতর্কের পর বাইডেনকে প্রার্থিতা ছেড়ে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় বোর্ড। সংবাদমাধ্যমে এক লেখায় বোর্ড বলেছে, ‘বাইডেন এখন যা করতে পারেন, তা হলো আবার নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়া।’ নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় বোর্ড ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছিল।

গত শুক্রবার মর্নিং কনসাল্ট প্রো পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্কের পর যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে বাইডেনের বিকল্প প্রার্থী চান। ওই জরিপে ২ হাজার ৬৮ জন নিবন্ধিত ভোটার অংশ নিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন বিতর্কে খারাপ করার পর নির্বাচনী তহবিলে অর্থদাতাদের নিয়েও বিপদে রয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। নির্বাচন ঘিরে প্রতি মাসে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যে পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করছেন, তাতে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। বর্তমান অবস্থায় বাইডেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কারণ, তাঁরা মনে করতে পারেন, তাঁরা দৌড়ে হারতে থাকা ঘোড়ার ওপর বাজি ধরছেন।

তবে বিতর্কের পর প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বাইডেনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দলের অনেকে। ডেমোক্রেটিক পার্টির মুখপাত্র মাইকেল টেইলর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ চিন্তাশক্তি ভালো নয়, এমন কোনো প্রার্থীর চেয়ে আমরা বরং একটি খারাপ রাতকেই (বিতর্কের রাত) মেনে নেব।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটনের মতো জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাট নেতারাও বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) ওবামা লিখেছেন, ‘বিতর্ক খারাপ হতেই পারে। বিশ্বাস করুন, এটা আমি জানি। তবে সারা জীবন মানুষের জন্য লড়াই করে গেছেন, আরেকজন নিজের কথা ভেবেছেন—এমন দুজনের ভেতর থেকে একজনকে বেছে নেওয়ার সুযোগ এখনো এই নির্বাচনে রয়েছে।’  

এখন এত আলোচনার মধ্যে যদি বাইডেন শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ছেড়ে দেন, তাহলে নতুন কাউকে বেছে নেওয়ার জন্য দুই মাসের কম সময় পাবে ডেমোক্রেটিক পার্টি। আগামী ১৯ আগস্ট দলটির জাতীয় কনভেনশন (সম্মেলন) শুরু হচ্ছে। সেখানে বিকল্প কাউকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম। শেষ পর্যন্ত যদি তা-ই হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকবে কমলার সামনে। তবে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে এই তালিকায় ডেমোক্র্যাট গভর্নর ও দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের নামও আসছে।