যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেনের সাজা কমাবেন না, এ বিষয়ে নতুন করে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মাদকাসক্তির তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে দোসীসাব্যস্ত হয়েছেন হান্টার বাইডেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়েরে গতকাল বুধবার এ কথা জানান। আগের দিন মঙ্গলবার হান্টার বাইডেনকে দোষীসাব্যস্ত করেন ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনের একটি আদালত।
প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি তাঁদের ছেলেকে ভালোবাসেন, সমর্থন করেন। এর বেশি আমি আর কিছুই বলতে পারছি না।—কারিন জিন-পিয়েরে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র
হান্টার প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ছেলে, যিনি ফৌজদারি অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন। এখন তাঁর বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার অপেক্ষা। যেসব অভিযোগে হান্টার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাতে তাঁর সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা কমানো কিংবা তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তাই সাজা হলে ছেলে হান্টারকে ক্ষমা করবেন বাইডেন? এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে।
এ বিষয়ে কারিন জিন-পিয়েরেকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি শুধু বলেন, ‘নতুন করে বলার কিছু নেই। এ বিষয়ে যা বলার প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) আগেই বলেছেন।’
হান্টারকে দোষীসাব্যস্ত করার আগেই বাইডেন বলেছেন, তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে ছেলেকে ক্ষমা করে দেবেন না।
মঙ্গলবার হান্টারকে দোষীসাব্যস্ত করার পরও বাইডেনকে একই অবস্থান প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ওই দিন এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ মামলায় যে রায়ই আসুক, তিনি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, হান্টারের সাজা কমানো বা তাঁকে ক্ষমা করার বিষয়ে তিনি বাইডেনের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। গত সপ্তাহেই বাইডেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ছেলেকে ক্ষমা করতে নিজের ক্ষমতা খাটাবেন না।
ফেডারেল আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা কমানো বা তাঁকে ক্ষমা করার এখতিয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্টের রয়েছে। তবে অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের আদালতে কেউ সাজা পেলে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না তিনি।
ছেলে দোষী সাব্যস্ত হলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখার অঙ্গীকার বাইডেনের
গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে ভ্রমণের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি তাঁদের ছেলেকে ভালোবাসেন, সমর্থন করেন। এর বেশি আমি আর কিছুই বলতে পারছি না।’
কারিন জিন-পিয়েরে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন আদালত হান্টারকে দোষীসাব্যস্ত করছিলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে উইলমিংটন ভ্রমণ করছিলেন।
মঙ্গলবার হান্টারকে দোষীসাব্যস্ত করার পরও বাইডেনকে একই অবস্থান প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ওই দিন তিনি বলেন, এ মামলায় যে রায়ই আসুক, তিনি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় বাইডেন–পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালে উইলমিংটনের আগ্নেয়াস্ত্রের একটি দোকান থেকে তিনি একটি রিভলবার কিনেছিলেন। আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার সময় তিনি কাগজপত্রে দেওয়া তথ্যে নিজের মাদকাসক্তির কথা গোপন করেছিলেন। এ ঘটনায় হান্টারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনেন সরকারি কৌঁসুলিরা।
প্রথম অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দেন হান্টার। দ্বিতীয় অভিযোগ, অস্ত্র বিক্রেতার নথিপত্রেও মিথ্যা তথ্য থাকার বন্দোবস্ত করেন তিনি। আর তৃতীয় অভিযোগ, হান্টার অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিজের কাছে রেখেছিলেন। হান্টার সব অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হান্টারকে যদি কারাদণ্ড দেওয়াও হয়, তবু সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর সাজা ঘোষণার পর আপিল আবেদন করতে হান্টারের আইনজীবী দল ৩০ দিন পর্যন্ত সময় পেতে পারে।