যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থীরা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। দুজনই বিভিন্ন সমাবেশে পরস্পরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। আবার বয়স নিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করছেন বেশি।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন ও ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো আজ বৃহস্পতিবার বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। জর্জিয়ার আটলান্টায় ওই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে দুই প্রার্থীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য প্রত্যক্ষ করবেন মার্কিনরা।
৯০ মিনিটের ওই বিতর্ক ক্যামেরায় ধারণ করা হবে। বিভিন্ন জনমত জরিপে এখন পর্যন্ত বাইডেন-ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবারের বিতর্কে অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিদেশের যুদ্ধ, অভিবাসন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাইডেনের পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিতর্কে অংশ নেওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মনোবল এবং মানসিক সুস্থতা নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রবীণ এই প্রেসিডেন্ট।
২০১২ সালে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডেমোক্রেটিক কৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন জিম মেসিনা। তিনি বলছিলেন, বাইডেনের বয়স ৮১, সেটি নিয়ে লুকানোর কিছু নেই। আবার ট্রাম্পও যে প্রায় কাছাকাছি বয়সের, সেটিও কারও অজানা নয়।
জিম মেসিনা আরও বলেন, এটি বয়স নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা নয়। এটি মূলত নীতি ও চরিত্রের প্রতিযোগিতা।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন ভোটাররা ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনের বয়স নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তবে ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে গেলে মেয়াদ শেষের আগেই সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের রেকর্ড ভেঙে দেবেন তিনি।
গত মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে একটি জনমত জরিপ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজ। ওই জরিপে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার মনে করেন, একজন দক্ষ প্রেসিডেন্টের তুলনায় বাইডেনের বয়স অনেক বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া সব বয়সী ভোটাররা তাঁর ফিটনেস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৬৫ ও তদূর্ধ্ব ভোটারও রয়েছেন।
বাইডেনের চেয়ে সাড়ে তিন বছরের ছোট রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয়েও একই অভিমত দিয়েছেন ৪২ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার।
ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পলিটিকসের পরিচালক ল্যারি সেবাতো বলেন, ‘এটি তাঁদের দুজনের ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। তবে বাইডেনকে বয়সী মনে হচ্ছে।’
চলতি বছরের শুরুতে হোয়াইট হাউসের একজন চিকিৎসক ঘোষণা দেন, বাইডেন দায়িত্ব পালনে সক্ষম। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর বয়স নিয়ে উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাইডেনের মধ্যে বার্ধক্যের ছাপ বেশি চোখে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কণ্ঠস্বর কমে যাওয়া, মাঝেমধ্যে ভুলে যাওয়া ও খিটখিটে মেজাজ। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আর্থ্রাইটিসের কারণে এমন হচ্ছে।
এ ছাড়া উড়োজাহাজ ও অনুষ্ঠান মঞ্চের সিঁড়ি থেকে বাইডেনের হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও অনলাইন ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে রিপাবলিকানরা তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।
২০২৩ সালের জুনে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে বিমানবাহিনীর একাডেমিতে ক্যাডেটদের স্নাতক সমাপনী উৎসবের মঞ্চে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পড়ে যান। এরপর তিনি নিজেই উঠে দাঁড়ান। পরে স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে যান তিনি। ওই ঘটনা গণমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। এর আগেও কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে।
বাইডেনের প্রচারশিবিরের প্রত্যাশা, প্রথম বিতর্কে আরেকবার দেখা যাবে, প্রেসিডেন্ট দেখাবেন তিনি শাসনের কঠোরতা সহ্য করতে পারেন। নীতি ও মেজাজের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বৈপরীত্য আঁকতে পারেন।
বিতর্ক সামনে রেখে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার একটি পডকাস্টে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন, বাইডেন একজন যোগ্য বিতার্কিক হতে যাচ্ছেন। তিনি তাঁকে খাটো করে দেখছেন না।
প্রথম দফার বিতর্কের আগে আরেকটি বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিতর্কে ভালো করতে বিশেষ ওষুধ সেবন করবেন প্রেসিডেন্ট। যদিও বাইডেনের প্রচারশিবির এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে।
ট্রাম্পের বয়স নিয়ে তেমন জোরালো আলোচনা না হলেও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নিজের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্টও।
গত জানুয়ারিতে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে রিপাবলিকান দলের প্রাথমিক বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালি ও মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে নিয়ে ত্রুটিপূর্ণ কথা বলেন ট্রাম্প।
ওই দিন ট্রাম্প ভুলবশত বলেন, ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় নিকি হ্যালি ‘নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন’।
নিকি হ্যালিকে জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরে প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে ট্রাম্পের কাছে হেরে যান তিনি। নিকি ৭৫ বছরের বেশি বয়সী রাজনীতিকদের ‘মানসিক দক্ষতা যাচাই’ পদ্ধতি চালুর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গত নভেম্বরে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে একটি বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, তাঁর (ট্রাম্পের) জ্ঞানের পরীক্ষা অসাধারণ ছিল।
গত শনিবার পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী জনসভায় ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, বাইডেন ও তাঁকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম দ্বৈত নীতি ব্যবহার করছে।
ওই দিন ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের বলেন, ‘আমি যদি একটি বেফাঁস কথা বলি, তখন তারা (গণমাধ্যম) বলে, তিনি (আমি) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। কিন্তু বাইডেন মঞ্চ ও সিঁড়ি থেকে পড়ে যান। সেই ব্যক্তি কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেন, সেই প্রশ্ন তারা তোলে না।’