যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস প্রথমবার বিতর্কে অংশ নিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সময় গতকাল মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল) দেড় ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা। বিতর্কে একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
বিতর্কে দুই প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন, কথা বলেছেন অনেক বিষয় নিয়ে। বিতর্কে তাঁরা কোনটা সত্য বলেছেন আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখাও করেননি কমলা হ্যারিস। তিনি সেখানে ছিলেন না। কারণ, নারী শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাখ্যা আছে। এটা ঠিক, কমলা হ্যারিস গত ২৪ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন না। আগে থেকে নির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়েছিল তাঁকে। তবে এর পরদিনই নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
বিতর্কের সময়ে ট্রাম্প দাবি করেছেন, আফগানিস্তানে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের একেবারে নতুন সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ফেলে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ট্রাম্পের দেওয়া এ তথ্য ভুল।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে সরকার পতনের পর সেই সরকারকে যেসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেসব উত্তরাধিকার সূত্রে পায় তালেবান। এ নিয়ে কংগ্রেসে দাখিল হওয়া একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ফেলে আসা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মূল্য ৭০০ কোটি ডলারের মতো।
হাইতির অভিবাসীরা ‘বিড়াল ধরে খাচ্ছেন’
ট্রাম্প দাবি করেন, সীমান্ত পেরিয়ে যেসব মানুষ ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড শহরে এসেছেন, তাঁরা বিড়াল ধরে খাচ্ছেন। বিড়ালসহ সেখানকার বাসিন্দাদের পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলছেন এসব মানুষ।
ট্রাম্পের এমন দাবি মিথ্যা। স্প্রিংফিল্ড শহর কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, হাইতির অভিবাসীরা স্থানীয় লোকজনের পোষা প্রাণী চুরি করে খেয়ে ফেলছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
বিতর্কের সময় কমলা হ্যারিস দাবি করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ছিল মহামন্দার পর সবচেয়ে বেশি। বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের এমন দাবি মিথ্যা।
এটা ঠিক যে ২০২০ সালের এপ্রিলে ট্রাম্প যখন ক্ষমতায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার বেড়ে হয় ১৪ দশমিক ৮, যা ছিল গত শতকের ত্রিশের দশকের বৈশ্বিক মহামন্দার পর সর্বোচ্চ। তখন করোনা মহামারি চলছিল। তবে একই বছরের ডিসেম্বরে ট্রাম্প যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, তখন দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৪।
কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান ‘ভুয়া’
হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্ক ট্রাম্প দাবি করেন, বাইডেন–হ্যারিস প্রশাসন বলছে, নতুন করে ৮ লাখ ১৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে তারা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে, তা ভুয়া।
তবে ট্রাম্পের এমন দাবি ভিত্তিহীন। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় যে সংস্থা কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিসংখ্যান তৈরি করে সেই সংস্থার হিসাবে, গত বছর দেশটিতে নতুন করে ৮ লাখ ১৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এক বছরের চেষ্টার পর কয়েক দফা যাচাই–বাছাই করে এই হিসাব পরিসংখ্যান তৈরি করেছে সংস্থাটি।
বিতর্কের সময় কমলা হ্যারিস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ধাপ্পাবাজি হিসেবে বর্ণনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু আমরা জানি, এটা খুবই সত্যিকারের একটি বিষয়।’
কমলা হ্যারিসের এ দাবি সত্য। ট্রাম্প একাধিকবার জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টিকে একটা ধাপ্পাবাজি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শুধু বক্তৃতা নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও একই কথা বলেছেন তিনি।
ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুই হতো না। কমলা হ্যারিস ছিলেন দূত। জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে সমঝোতার জন্য তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। কমলা গিয়েছিলেনও এবং এর তিন দিন পরই যুদ্ধ শুরু হয়।
ট্রাম্পের এ দাবি মিথ্যা। রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলা শুরুর কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন; কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর কোনো সাক্ষাৎ হয়নি। আর এই তিনজনের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।