যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের দীর্ঘদিন পর কথা হলো। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ পুনরায় চালুসহ নানা বিষয়ে একমত হয়েছেন এ দুই শীর্ষ নেতা। এর মধ্য দিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের টানাপোড়েনের সম্পর্কে ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহরে বুধবার সকালে চার ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। এ সময় দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে যোগাযোগের জন্য একটি হটলাইন চালুর বিষয়ে একমত হন তাঁরা। বাইডেন বলেন, ‘আমরা আবার সরাসরি যোগাযোগ চালু করতে যাচ্ছি।’ এ নিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে সি বলেন, ‘সরাসরি ফোনে কথা বলার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমরা এখন ফোনকলের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারব।’
দুই প্রেসিডেন্ট সর্বশেষ আলোচনায় বসেছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বরে, ইন্দোনেশিয়ার বালি শহরে। সেবার করোনা মহামারি ও যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের কথা হয়েছিল। এবারের বৈঠকেও দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের পেছনের নানা কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন–বেইজিংয়ের সামরিক সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর ঘিরে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের ‘গোয়েন্দা বেলুন’–কাণ্ডে সে সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আবার চালু করতে বেশ আগ্রহী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। বুধবারের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে একমত হয়েছেন বাইডেন ও সি। এ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দুই দেশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক করবে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ এক মার্কিন কর্মকর্তা। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি নিয়ে আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন ও সি।
সামরিক যোগাযোগ পুনরায় চালুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সাবেক উপসহকারী মন্ত্রী মিক মুলরয় বিবিসিকে বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সব সময় সামরিক পর্যায়ে যোগাযোগ চালিয়ে যেত। এর উদ্দেশ্য ছিল দুর্ঘটনাবশত বা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে যেন পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।’
সান ফ্রান্সিসকোর বৈঠকে বাইডেন ও সি মাদক পাচার বন্ধে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ফেন্টানিল মাদকের ব্যবহার কমাতে মাদকটির বিভিন্ন উপাদান প্রস্তুতকারী চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টানতে রাজি হয়েছেন সি। গত বছর মাত্রাতিরিক্ত ফেন্টানিল ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই মাদক ও এটি তৈরির উপাদান প্রস্তুত করা হয়। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পদক্ষেপ নিতে পাশাপাশি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন বাইডেন ও সি।
বুধবারের বৈঠকে উঠে আসে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়গুলো। এ সময় তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন সি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৈঠকে সি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, আপনারা তাইওয়ানে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করুন এবং চীনের ভূখণ্ডের শান্তিপূর্ণ একত্রকরণকে সমর্থন করুন। চীন নিজ ভূখণ্ডের একত্রকরণ করবে। এটা থামানো যাবে না।’
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এ সময় এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, গত জুনের মতো তিনি এখনো চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বৈরশাসক হিসেবে মনে করেন কি না? জবাবে বাইডেন বলেন, ‘সি এমন এক মানুষ, যিনি পুরো একটি দেশ পরিচালনা করছেন। এটি একটি কমিউনিস্ট দেশ। সেদিক দিয়ে দেখলে তিনি একজন স্বৈরশাসক। এটি এমন একটি সরকারব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা আমাদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।’