সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্কের মঞ্চে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্কের মঞ্চে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিতর্কের পর বাইডেন শিবিরে হতাশা, চনমনে ট্রাম্প শিবির

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিতর্কে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা পরস্পরকে আক্রমণ করেন। আক্রমণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যায়।

তবে বিতর্কে বাইডেন ভালো করতে পারেননি। এ নিয়ে তাঁর নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে হতাশা দেখা গেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনের বিতর্ক শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিপদঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।

অবশ্য বাইডেন মনে করেন, তিনি ভালোই করেছেন। একই সঙ্গে বলেন, একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বিতর্ক করা কঠিন।

অন্যদিকে বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের প্রচারশিবির তাঁর জয় দাবি করে। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান দলের নেতা স্টিভ স্কালিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্প বিতর্কে জয়ী হয়েছেন। বাইডেন আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত নন। ট্রাম্পই আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের একমাত্র পছন্দের প্রার্থী।

ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টারা বিতর্কের সময় তাঁর (ট্রাম্প) নৈপুণ্য উদ্‌যাপন করেছেন। বাইডেনকে নিয়ে আসা প্রতিক্রিয়া তাঁরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকে আসা ব্যাপক উদ্বেগের দিকটি তাঁদের নজরে এসেছে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পকে শক্তভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি বাইডেন। এই সুযোগে ট্রাম্প অনর্গল মিথ্যা বলে গেছেন।

বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নিজেও স্বীকার করেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী (বাইডেন) ধীরগতিতে শুরু করেছিলেন। তবে পরে দৃঢ়ভাবে বিতর্ক শেষ করতে পেরেছেন। ভোটারদের বাইডেনের কৃতিত্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, বিতর্কের দিকে নয়।

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন লড়বেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। আর রিপাবলিকান পার্টির হয়ে লড়বেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টায়) সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে বিতর্কে অংশ নেন বাইডেন ও ট্রাম্প। চার বছর পর তাঁরা প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্ক মঞ্চে উঠলে প্রথা অনুসারে করমর্দন করেননি তাঁরা। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেন। অপর দিকে বাইডেন কথা বলেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড।

বাইডেন-ট্রাম্পের বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, গণতন্ত্র, অভিবাসন, সীমান্ত সংকট, গর্ভপাত, সামাজিক নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, কর, কর্মসংস্থান, জাতীয় ঋণ, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয় উঠে আসে। বিভিন্ন বিষয়ে বলতে গিয়ে তাঁরা পরস্পরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।

অর্থনীতি

মার্কিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুজন দুজনকে দোষারোপ করেন। বাইডেন দাবি করেন, তিনি ট্রাম্পের রেখে যাওয়া নাজুক অর্থনীতি পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ভালো অর্থনীতি পেয়েছেন।

সীমান্ত সংকট

বাইডেনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সংকটে কেন ভোটাররা তাঁর ওপর আস্থা রাখবেন। জবাবে বাইডেন বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে একটি দ্বিদলীয় সীমান্ত বিল পাস করার জন্য তাঁর প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে। অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের আমলের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করেন বাইডেন। তিনি বলেন, তখন এমন একটি পরিস্থিতি দেখা যায়, যেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশী মায়েদের কাছ থেকে তাঁদের শিশুদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। শিশুদের আলাদা করছিলেন। শিশুদের খাঁচায় রাখছিলেন। পরিবারগুলোর পৃথককরণ নিশ্চিত করেছিলেন। এটা সঠিক উপায় নয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস অপরাধের জন্য বাইডেনের অভিবাসননীতিকে দায়ী করেন ট্রাম্প।

ক্যাপিটল হিলে হামলা

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন বাইডেন। তিনি বলেন, ক্যাপিটল হিলে যেতে লোকজনকে উৎসাহিত করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বসে বসে সেদিনের ঘটনা দেখেছেন। ট্রাম্প বলেন, সেদিন তাঁর কার্যত কিছুই করার ছিল না।

গাজা যুদ্ধ

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করবেন কি না, এই প্রশ্নে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি ট্রাম্প। বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়, এই যুদ্ধ শেষ করতে তিনি কী করবেন। উত্তরে বাইডেন বলেন, হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না। বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাঁর জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ

বিতর্কে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠে আসে। বাইডেন বলেন, তিনি মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী। তিনি পুরোনো সোভিয়েত সাম্রাজ্য আবার প্রতিষ্ঠা করতে চান। ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থের চেয়ে বেশি অস্ত্র দেওয়ার কথা জোরালোভাবে বলেন বাইডেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাবেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের শর্ত নিয়ে ট্রাম্পকে প্রথমে একবার প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। প্রথমবার ট্রাম্প উত্তর এড়িয়ে যান। এরপর দ্বিতীয়বার ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, পুতিনের শর্তগুলো তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, গ্রহণযোগ্য নয়।

মামলা

ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করেন বাইডেন। তিনি ট্রাম্পের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ নিয়ে তিনি ট্রাম্পকে ‘কটূক্তি’ করেন। ট্রাম্পকে একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেন বাইডেন। বিতর্কের একপর্যায়ে বাইডেন বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে একাধিক মামলা রয়েছে, সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। প্রকাশ্যে এক নারীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ট্রাম্পকে যে আদালত জরিমানা করেছেন, সে কথা তোলেন বাইডেন। ট্রাম্প বিস্তর অপরাধ করেছেন বলে বাইডেন অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রাম্প রাতে এক পর্ন তারকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন, অথচ তখন ঘরে তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

বয়স

বয়স নিয়ে বাইডেন বলেন, ট্রাম্প তাঁর চেয়ে মাত্র কয়েক বছরের ছোট। তবে তিনি (ট্রাম্প) অনেক কম দক্ষ। বাইডেন ভোটারদের ট্রাম্পের রেকর্ড দেখার জন্য আহ্বান জানান। প্রতিক্রিয়ায় বাইডেনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ট্রাম্প দুজনের জ্ঞানীয় ক্ষমতার পরীক্ষার কথা বলেন।