যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইতিমধ্যে অন্তত ১০০ জন ধনকুবের সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের কেউ কমলাকে সমর্থন দিয়েছেন, আবার কেউ ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত ধনকুবেরদের সমর্থনের দিক থেকে কমলার ঝুলিটাই বেশি ভারী।
শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প। তবে ধনকুবেরদের সবাই যে প্রার্থীদের সমর্থন দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন, তা নয়; ওয়ারেন বাফেট ও মার্ক জাকারবার্গের মতো অন্যতম শীর্ষ ধনীদের কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে নিজেদের দূরে রাখছেন।
ফোর্বসের তালিকা অনুসারে ৭৬ জন ধনকুবের কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিচ্ছেন। আর ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন আছে ৪৯ ধনকুবেরের।
আরও অনেক ধনকুবের হয়তো কোনো না কোনো প্রার্থীকে অনুদান দিয়েছেন বা দেবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনুদানের কথা জানা যাবে না। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হবে নির্বাচনেরও পরে, ডিসেম্বর মাসে।
কমলার প্রতি ধনকুবেরদের সমর্থন বেশি হওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছে বেখাপ্পা বলে মনে হতে পারে। কারণ, ধনকুবেরদের সুবিধাজনক নীতিমালার পক্ষে ট্রাম্প যেসব প্রচার চালিয়ে থাকেন, তা নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা করেন তিনি। তবে কমলাকে সমর্থন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ধনকুবেররা।
গত মাসে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানানো ১২ জনের বেশি ধনকুবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রকাশিত হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই ধনকুবেররা বিশ্বাস করেন যে কমলা আইনের শাসন, স্থিতিশীলতা ও ব্যবসায়িক পরিবেশবান্ধব নীতিমালাগুলোকে এগিয়ে নেবেন।
কমলাকে সমর্থন দেওয়া ৭৬ জন ধনকুবেরের মধ্যে ২৮ জন গত আগস্ট মাসে কমলার প্রচার-প্রচারণার কাজে নিযুক্ত সংগঠনগুলোকে অন্তত ১০ লাখ ডলার করে অনুদান দিয়েছেন। আর আগস্ট মাসে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরকে ১০ লাখ ডলার করে অনুদান দিয়েছেন অন্তত ২৮ জন ধনকুবের।
এখনো কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন দেননি, এমন ধনকুবেরদের মধ্যে আছেন জেফ বেজোস, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জাকারবার্গ ও বিল গেটস।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। তিনি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন কিংবা অনুদান দেননি। গত ১৩ জুলাই নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পর বেজোস লিখেছিলেন, ‘আক্ষরিক অর্থেই আগুনের নিচে থেকে ট্রাম্প অত্যন্ত শিষ্টাচার ও সাহস দেখিয়েছেন।’ তবে ট্রাম্পের প্রশংসা করে ওই কথা লিখলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাঁর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন বেজোস। আবার ২০২০ সালে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইনস্টাগ্রামে বেজোস লিখেছিলেন, ‘বাইডেনের জয় ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ঐক্য, সহানুভূতি ও শালীনতা বিগত দিনের বৈশিষ্ট্য হয়ে যায়নি।’
বিশ্বের শীর্ষ ষষ্ঠ ধনী ওয়ারেন বাফেটও নির্বাচনে সরাসরি কাউকে সমর্থন দেননি। ২০২০ সালে বাফেট বলেছিলেন, তিনি ডেমোক্র্যাট। আবার ২০১৬ সালে আয়কর–সংক্রান্ত এক ইস্যুতে ট্রাম্পের ওপর চড়াও হয়েছিলেন তিনি।
মার্ক জাকারবার্গও একই পথে হাঁটছেন। নিউইয়র্ক সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, জাকারবার্গ তাঁকে বলেছেন যে তিনি এ নির্বাচনে কোনো ডেমোক্র্যাটকে ভোট দেবেন না। ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। তবে জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান মেটার মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্বের তৃতীয় এ শীর্ষ ধনী নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দিচ্ছেন না।
একই অবস্থা বিল গেটসেরও। তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সমর্থক। ফ্রেঞ্চ গেটস কমলাকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন। তবে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন দেননি।