যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো মুখে খাওয়ার গর্ভনিরোধক বড়ি অনুমোদন দিয়েছে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ওপিল নামে এই গর্ভনিরোধক বড়িটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নন-প্রেসক্রিপশন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনে খাওয়া যাবে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গর্ভনিরোধক বড়িটি ওষুধের দোকানে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকলজিস্ট (এসিওজি) বলছে, এটি ‘প্রজননস্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে একটি সমালোচনামূলক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’।
এক বিবৃতিতে এসিওজি বলেছে, সরবরাহের বাধার কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণে অসংগত ব্যবহার বা গর্ভনিরোধক ব্যবহার না করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এখন স্থানীয় ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী বিক্রির অনুমতি এ বাধা কিছুটা দূর করবে। আগে এ ক্ষেত্রে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য কাজ থেকে ছুটি নেওয়া, অনেক সময় বিভ্রান্তিকর প্রেসক্রিপশনের কারণে এ ক্ষেত্রে মানুষের অনীহা ছিল।
গর্ভনিরোধক বড়ি হলো একটি ‘মিনি পিল’। এতে প্রোজেস্টেরন হরমোনের একটি কৃত্রিম রূপ প্রোজেস্টিন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ইস্ট্রোজেন থাকে না। এটি মুখে খাওয়ার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, যা গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করে।
এফডিএর তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৩ সালে এফডিএ ০.০৭৫ মিলিগ্রাম নরজেস্ট্রেল ট্যাবলেট প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ব্যবহারের অনুমোদন ছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী ওপিল প্রতিদিন একই সময়ে ব্যবহার গ্রহণ করলে তা প্রায় ৯৮ শতাংশ কার্যকর।
ওপিল জরুরি গর্ভনিরোধ বা গর্ভপাতের কোনো ওষুধ নয়। প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে দেশটিতে আরও কয়েকটি ‘মিনি পিল’ পাওয়া যায়। তবে ওপিল একমাত্র মুখে খাওয়ার গর্ভনিরোধক, যা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এসিওজির মতে, বেশির ভাগ প্রোজেস্টিন শুধু ঘন সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা তৈরির মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজ করে। এতে শুক্রাণু জরায়ুতে গিয়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত করা কঠিন করে তোলে। কিছু ক্ষেত্রে আবার প্রোজেস্টিন ডিম্বস্ফোটন বন্ধ করে দেয়। তবে যা–ই হোক, প্রায় ৪০ শতাংশ নারী মিনি পিল গ্রহণ করেন, যাতে তাঁদের ডিম্বস্ফোটন অব্যাহত থাকবে।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ–বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিন ওয়েস্টহফ বলেছেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করলে প্রোজেস্টিন বড়িগুলো সমন্বিত বড়ির মতোই কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ‘গর্ভনিরোধক কার্যকারিতার জন্য শুধু প্রোজেস্টিনই যথেষ্ট। ইস্ট্রোজেনের সংযোজন নিয়মিত রক্তপাত ঘটাতে সাহায্য করে এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যকারিতাও বাড়াতে পারে। ইস্ট্রোজেন যোগ করার কিছু সুবিধা আছে, তবে গর্ভনিরোধক কার্যকারিতার জন্য এটি প্রয়োজনীয় নয়।
নিউজার্সির ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ এবং প্রজননস্বাস্থ্যের চিকিৎসকদের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান (চেয়ার) ক্রিস্টন ব্র্যান্ডি বলেন, ওপিলকে শুধু গর্ভাবস্থা রোধ করার জন্য নয়, একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
ওপিল কেনার জন্য কোনো বয়সসীমা নেই। ব্র্যান্ডির মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না, এমন কিশোরী, তরুণী, প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর এটি একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্র্যান্ডি বলেন, ‘কিশোরীদের ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণের মতো প্রজননস্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধা আছে। তাদের অনেকেই সেই সেবা পাওয়ার জন্য কখনোই চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে যায় না।’
এসিওজির স্ত্রীরোগবিষয়ক কনসেনসাস কমিটির চেয়ারম্যান অ্যানে-মেরি অ্যামিস ওয়েলশলেগার বলেছেন, কারও কারও জন্য ওপিল একটি ভালো স্বল্পমেয়াদি বিকল্প হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকেন, কিন্তু অবিলম্বে তাঁর জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁরা ওপিল শুরু করতে পারেন।’
অ্যানে-মেরি অ্যামিস ওয়েলশলেগার এক বিবৃতিতে বলেন, মুখে খাওয়ার ইস্ট্রোজেন–সমৃদ্ধ গর্ভনিরোধক মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও স্তনের কোমলতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
এফডিএ বলছে, ওপিলেরও এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এর মধ্যে আছে অনিয়মিত রক্তপাত, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, পেটে ব্যথা ও ফোলাভাব।
তবে অ্যামিস ওয়েলশলেগার বলেছেন, যাঁদের মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং রক্ত জমাট বাঁধার উচ্চঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের জন্য এই বড়ি নিরাপদ।
ওপিলের দাম ও বিমা কভারেজ কেমন হবে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, নন-প্রেসক্রিপশন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সাশ্রয়ী মূল্যে রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওপিল কম খরচে ও সহজে পাওয়ার সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ রোধ করতে পারে। এফডিএর তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর দেশটিতে ৬১ লাখ গর্ভধারণের প্রায় অর্ধেক (৪৬ শতাংশ) অনিচ্ছাকৃত।
চলতি বছর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ও জেলা বিচারক গর্ভপাতের ওষুধ মিফেপ্রিস্টোনকে এফডিএর অনুমোদন দেওয়ার চ্যালেঞ্জ করে রায় দিয়েছেন। এ কারণে ওপিলের অনুমোদনের আইনি চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।
জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির গাইনোকলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিকস বিভাগের কমপ্লেক্স ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার রবিনসন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, মিফেপ্রিস্টোন মামলার রায় অবশ্যই ওপিলের অনুমোদন বা কোনো ওষুধের অনুমোদনে প্রভাব ফেলতে পারে।’