যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা তড়িঘড়ি করে জরুরি প্রস্তুতি শেষ করছেন। কেউ আবার এরই মধ্যে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন। কারণ, সেখানে ধেয়ে আসছে বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড় হারিকেন মিল্টন।
হারিকেন মিল্টন পাঁচ মাত্রার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটির কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৫ মাইল বা ২৭০ কিলোমিটার। আজ বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণ শক্তিতে ফ্লোরিডায় আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হারিকেন হেলেনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই অঙ্গরাজ্যটি আবারও দুর্যোগের মুখে পড়ল।
ব্রাডেনটন শহরের বাসিন্দা জেরাল্ড লেমাস বলেন, ‘পাঁচ মাত্রা মানে, আপনার দিকে দৈত্যাকার একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে।’ বর্তমানে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন লেমাস। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে থাকতে চাই না। যেখানেই আঘাত করুক না কেন, এটি হতে যাচ্ছে জীবন তছনছ করে দেওয়া ঝড়।’
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল মঙ্গলবার ফ্লোরিডার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সতর্ক করেছেন। কারণ, এটি ‘জীবন-মৃত্যুর’ ব্যাপার। স্থানীয় প্রশাসন এরই মধ্যে সাধারণ মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডেসানটিস গতকাল বলেন, ফ্লোরিডায় কয়েক ডজন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। দানবীয় এই ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে নিরাপদ এলাকায় এসব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
দক্ষিণ ফ্লোরিডার পেট্রল স্টেশনগুলোয় লম্বা লাইন দেখা গেছে। অনেক স্টেশনে এরই মধ্যে জ্বালানি শেষ হয়ে এসেছে। এ বিষয়ে গভর্নর ডেসানটিস বলেন, নিরবচ্ছিন্ন অপসারণ কার্যক্রম চালানোর জন্য স্টেশনগুলোয় পেট্রল সরবরাহ করা হচ্ছে। রাস্তার পাশে চার্জিং স্টেশন বসানো হয়েছে।
অন্যদিকে হারিকেন মিল্টনের প্রস্তুতি এবং হেলেনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চলমান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য বাইডেনের জার্মানি ও অ্যাঙ্গোলা সফর বাতিল করেছে হোয়াইট হাউস। গতকাল হোয়াইট হাউসে তিনি বলেন, ফ্লোরিডায় গত এক শতকের মধ্যে এটি হতে যাচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। তিনি ফ্লোরিডার বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখনই এলাকা খালি করুন, এখনই, এখনই।’
দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বে তাণ্ডব চালায় হারিকেন হেলেন। ২০০৫ সালে ক্যাটরিনার পর এটি ছিল মূল ভূখণ্ডে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়। এতে অন্তত ২২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফ্লোরিডায় মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। কয়েক শ মানুষ এখনো নিখোঁজ।
ফ্লোরিডার আনা মারিয়া শহরে নিজের ঘরটি মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছেন এমএল ফার্গুসন। গত মাসে হারিকেন হেলেনে তাঁর ঘরটি খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফার্গুসন বলেন, ‘হেলেনের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ হতে পারে হারিকেন মিল্টনের প্রভাব। আমার গাড়িটি মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। আমার জিনিসপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের পর আমি প্রকৃত অর্থে গৃহহীন হয়ে পড়ব।’
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার শক্তিশালী বাতাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করেছে। হারিকেন হেলেনের কারণে রাস্তায় পড়ে থাকা অনেক ধ্বংসাবশেষ বাতাসে উড়ে এসে বিপদ ঘটাতে পারে।
ফ্লোরিডায় ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সর্বোচ্চ ১৫ ইঞ্চি বা ৩৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। আর উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ থেকে ১৫ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কাউন্টিগুলো সোমবার থেকে অপসারণের আদেশ জারি করতে শুরু করেছে। পশ্চিম ও মধ্য ফ্লোরিডার রাস্তাগুলোয় টোল স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল থেকে অনেক কাউন্টিতে স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত টাম্পা ও অরল্যান্ডোর বিমানবন্দরগুলোয় ফ্লাইট ওঠানামা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।