কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্প-কমলার লড়াই

ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক উষ্ণ বেশি। ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার বিষয়ে জোর দিয়ে গাজা ইস্যুতে আলাদা অবস্থান তৈরি করেছেন কমলা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের লড়াই জমে উঠেছে। সেই সঙ্গে ছুটছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। তাঁদের লড়াই জমে উঠেছে ‘মধ্যপ্রাচ্য’ নীতি ঘিরে। ট্রাম্প–নেতানিয়াহুর পুরোনো ঘনিষ্ঠতার মধ্যে কমলার বদলানো সুর মার্কিন ভোটারদের কতটা কাছে টানবে, তার ওপর নির্ভর করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভাগ্য।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। যেকোনো সময় আঞ্চলিক সংঘাত আরও বড় রূপ নিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সমালোচনা করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি না জিতলে এর ফল ভালো হবে না। গত শুক্রবার তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতে এসব কথা বলেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস গাজা নিয়ে তাঁর সুর বদলেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, গাজা বিষয়ে তিনি চুপ থাকবেন না। তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মার্কিন ভোটাররা এ বিষয়ে কমলার কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করেন।

নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশ চালাচ্ছে অযোগ্য কিছু লোক। আমরা যদি জিতি, এটা হবে খুব সহজ। সবকিছুই খুব দ্রুত কাজ করবে। আমরা যদি না জিতি, তবে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ বাধতে পারে, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে।’

ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকে পরে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, ‘ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যখন তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরবেন, তখন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজে ছড়ানো ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়বেন।’

গাজায় ৯ মাস ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু।

আমরা যদি না জিতি, তবে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ বাধতে পারে, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে: ট্রাম্প।

গত বৃহস্পতিবার কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠকের সঙ্গে গত শুক্রবার ট্রাম্পের বৈঠকের সুরে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। কমলা হ্যারিস নেতানিয়াহুকে গাজা চুক্তিতে সম্মত হতে বলেন এবং গাজা বিষয়ে চুপ না থাকার কথাও বলেন।

কমলা বলেন, ৯ মাস ধরে গাজায় যা হচ্ছে, তা ধ্বংসাত্মক। মৃত শিশুর ছবি এবং মরিয়া ক্ষুধার্ত মানুষ নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে যাচ্ছে, কখনো কখনো দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবারের জন্য বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।

এদিকে গত কয়েক দিনে জনমত জরিপগুলোয় ট্রাম্পকে জোর টক্কর দিচ্ছেন কমলা। এমনকি কখনো কখনো ট্রাম্পের থেকে এগিয়েও গেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর কমলা হ্যারিস সামনে এসে ট্রাম্পের বিষোদ্‌গারের মুখে পড়েছেন। গত শুক্রবার ধর্মীয়ভাবে কট্টর ডানপন্থী সমর্থকদের এক সমাবেশে ট্রাম্প কমলাকে আক্রমণ করে ইহুদিবিদ্বেষী বলেছেন। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর থাকার সময়ে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা কী কী করেছেন, তা নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন। তবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের বেশির ভাগ অভিযোগের সঙ্গেই বাস্তবতার মিল নেই। কমলার স্বামী ডগলাস এমহফ একজন ইহুদি।

কমলা হ্যারিস নেতানিয়াহুকে গাজা চুক্তিতে সম্মত হতে বলেন এবং গাজা বিষয়ে নিজের চুপ না থাকার কথাও বলেন।

২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তিনি পরে প্রার্থিতা পাওয়ার সে প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তার আগে পর্যন্ত কমলা যে প্রচার চালিয়েছিলেন, তাতে কিছু ঘাটতি ছিল। তিনি পরিষ্কার কোনো বার্তা দিতে পারেননি। তখন তাকে কিছু ভুল ও অসমীচীন কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে। ওই সময় কমলা ছিলেন সিনেটর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা পেতে অন্য অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মতো কমলাও বামপন্থার দিকে ঝুঁকেছিলেন।

এখন কমলা হ্যারিসের সে অবস্থানগুলোকেই বিরোধীরা সামনে টেনে এনে আক্রমণ করছেন। ট্রাম্প একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘মিট সান ফ্রান্সিসকো র‍্যাডিকেল কমলা হ্যারিস।’ এতে ওই সময়ে কমলা হ্যারিস যে নীতিমালাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তার অনেকগুলোই তুলে ধরা হয়েছে।

বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক উষ্ণ বেশি। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে গাজার হতাহত নিয়ে নেতানিয়াহুর নানা দ্বিমত রয়েছে, তাতে ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহে কিছু বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনের প্রশংসা করলেও তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের নানা উদ্যোগের কথা বেশি তুলে ধরেছেন।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, কমলা হ্যারিস বিষয়ে মানবাধিকার কর্মকর্তারা বলছেন, মাকিন সামরিক ও কূটনীতিক সমর্থনের বিষয়ে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন না করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে বাইডেন যে ভোটারদের থেকে দূরে সরে গেছেন, কমলা হ্যারিস তাদের মন জয় করতে পারবেন না।

তবে কমলা যে সুরে কথা বলেছেন, তা বাইডেনের সরাসরি ইসরায়েলপন্থী বিবৃতির চেয়ে আলাদা। ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার বিষয়ে জোর দিয়ে গাজা ইস্যুতে বাইডেনের চেয়ে আলাদা অবস্থান তৈরি করেছেন হ্যারিস। তবে অধিকারকর্মী হাজামি বার্মাদার মতে, ভাইস প্রেসিডেন্টের সহানুভূতির ওই মন্তব্য গাজা পরিস্থিতিতে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করবে না।

বার্মাদা বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, গাজার শিশুদের মুখে নিজের সন্তানকে দেখেন তিনি। তারপরও ব্লিঙ্কেনের দপ্তর কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র ইসরায়েলকে দিয়ে যাচ্ছে।