মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলান

কাউন্টারপাঞ্চের নিবন্ধ

ইরানকে দূরে রাখার মাশুল গুনতে হবে বাইডেনকে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে সৌদি আরব, ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল সফর করেন। তাঁর এ মধ্যপ্রাচ্য সফরকে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এতে ঝুঁকিও আছে। ইরানের পরমাণু চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত না করার বিষয়টি এ সফরের সফলতাকে ছাপিয়ে বেশি করে আলোচনায় এসেছে। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির জ্যেষ্ঠ ফেলো মেলভিন গুডম্যান পুরো পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রাথমিকভাবে অনেকটা সহজসাধ্য কাজগুলোই করছেন, তাঁর পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুর্দশাগ্রস্ত মেয়াদে যেগুলো নষ্ট করা হয়েছিল; অনেকটা হাতের নাগালে থাকা ফল পেড়ে ঝুড়িতে রাখার মতো। পশ্চিমাদের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোকে চাঙা করেছেন বাইডেন; প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলেও ফিরে গেছেন তিনি। ট্রাম্প এসব জায়গা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।

কিন্তু আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের গুবলেট পাকানো অবস্থার মেরামতে হাত দিতে বাইডেন কিছুটা সন্ত্রস্ত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। চীনা পণ্য আমদানির ওপর প্রতিহিংসাবশত ট্রাম্পের আরোপ করা ট্যারিফ এখনো বহাল। যদিও এই ট্যারিফ প্রত্যাহারের মাধ্যমে সিনো-আমেরিকান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে ও মূল্যস্ফীতির চক্কর থেকে মার্কিন অর্থনীতি অনেকটাই রক্ষা পাবে।

অন্যদিকে পরমাণু চুক্তিতে ফিরে গেলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইসরায়েল ও সৌদি আরবের অব্যাহত চাপেরও একটা ফয়সালা হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গত সপ্তাহের ইসরায়েল ও সৌদি আরব সফর এটাই তুলে ধরেছে যে জেরুজালেম থেকে রিয়াদ পর্যন্ত ট্রাম্পের বিছানো জালেই আটকা থাকবে বাইডেন প্রশাসন।

বাইডেন সৌদি আরব সফর করলেন, যাকে বলে টুপি (ক্যাপ) হাতে নিয়ে; বিনয়ী বাইডেন তেলের উৎপাদন বাড়াতে বললেন সৌদি কর্তৃপক্ষকে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর মোলাকাত, দুজনের মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলানোর ছবি—দেখল গোটা বিশ্ব।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে না ফেরাটা বাইডেনের জন্য মারাত্মক ভুল; এর পরিণতিতে অঞ্চলটিকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। দ্য জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা না করলেও এর ফল ভোগ করেছে জেরুজালেম ও রিয়াদ। পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে শঙ্কিত।

এই পরমাণু চুক্তি সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবার আমলের অন্যতম বড় বিজয়। এ ব্যাপারে দূতিয়ালি করেছিলেন দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে বলা যায়, এই অর্জন তাঁকে গত তিন দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রীতে পরিণত করেছিল।

ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে না ফেরাটা বাইডেনের জন্য মারাত্মক ভুল; এর পরিণতিতে অঞ্চলটিকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। দ্য জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা না করলেও এর ফল ভোগ করেছে জেরুজালেম ও রিয়াদ। পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে শঙ্কিত।

পরমাণু চুক্তিটি ছিল বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক চর্চার ফল, চর্চাটা হয়েছিল সতর্কতার সঙ্গে। ইউরোপের প্রধান প্রধান দেশের পাশাপাশি রাশিয়া ও চীন এমন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে পৌঁছায়, যাতে ১৯৬৯ সাল থেকে বলবৎ নন-প্রলিফারেশন ট্রিট্রি বা এনপিটিকে (পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি) মান্যতা দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিনিধিদের নজরদারি করতে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় ইরান। একই সঙ্গে ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পরিমাণ কমিয়ে আনাসহ সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম রাশিয়ায় পাঠাতে রাজি হয় দেশটি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপারেও তারা কথা দেয়। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত চুক্তিটির প্রশংসা করেছিলেন।

পারস্য উপসাগরের সম্ভাব্য সংঘাতময় পরিস্থিতিকে সম্ভাব্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মিটমাটের যুগে প্রবেশ করানোর সক্ষমতা ছিল এ চুক্তির। কিন্তু ট্রাম্প ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বলটন চুক্তিটি খারিজ করে দেন। ফলে অঞ্চলটিতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনার বিষয়টা আতান্তরে পড়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উচিত চুক্তিটিকে পুনর্বহাল করা। ইরান (সে সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার) পরমাণু প্রকল্প সীমিতকরণে যেকোনো ধরনের সফলতা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার কমানোর একটা সুযোগ তৈরি করতে পারে।

জো বাইডেনের নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা, ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যতটা যা করছে বা করার জন্য প্রস্তুত আছে, তা কখনো ইসরায়েলি নেতৃত্বের কাছে যথেষ্ট মনে হবে না। এর আগে ডেমোক্র্যাট দুই প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও বারাক ওবামা ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করেছেন, কিন্তু তাঁদের উদ্যোগ কখনো প্রশংসিত হয়নি।

চুক্তিটি পুনর্বহালের অংশ হিসেবে বাইডেনকে অবশ্যই ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংস্থা’র তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। ট্রাম্প তাঁর মেয়াদে এ গার্ডকে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। সন্ত্রাসী সংস্থার তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি যদিও মূলত প্রতীকী, তবু রিপাবলিকানদের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে বাইডেন তালিকা থেকে ওই বাহিনীকে বাদ দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। ফলে তিনি চমৎকার একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছেন।

(একইভাবে পূর্ব জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট ও যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি মিশন পুনরায় চালুর মধ্য দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাইডেন প্রস্তুত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতারোহণের পরপরই এটা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের ইসরায়েলপন্থী ডেমোক্র্যাট নেতাদের ভয়ে আর এগোননি।)

‘শেষ অবলম্বন’ হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের কথা বলার মাধ্যমে জো বাইডেন ইসরায়েল ও সৌদি আরবের স্বার্থের পালেই হাওয়া দিয়েছেন। ইসরায়েলি সাংবাদিকের করা এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বরং সেটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত ছিল বাইডেনের, তা না করে তিনি ইরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সন্তুষ্ট করায় সচেষ্ট হলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি সম্ভাব্য শক্তি প্রয়োগের প্রসঙ্গ টানলেন। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল এবং উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক সহযোগিতা বেড়েছে। এ পটভূমিতে অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ওই অঞ্চলের কারও সঙ্গে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবিষয়ক সমঝোতা বা চুক্তি না করা। অর্থাৎ কোনো ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

যদি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে চায়, নিজেদের সামরিক উপস্থিতি সীমিত করতে চায়, তা হলে সৌদি আরব ও ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ইয়েমেনে এখন অস্ত্রবিরতি চলছে। বাস্তবতা হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর চেয়ে চমৎকার সুযোগ আর সামনে আসেনি দুই পক্ষকে আলাপ শুরুর ব্যাপারে তাগাদা দেওয়ার।

ইরানের হুমকির বিষয়টি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলার অভ্যাস যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়তে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে ইরান। সত্যি কথা বলতে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এসব ব্যর্থ রাষ্ট্রের ভূমিকা কার্যত শূন্য।

উপরন্তু ইরানিরা মুসলিম হলেও শিয়া, কিন্তু আরব নয়। ফলে সুন্নি অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ মেয়াদে তাদের সম্ভাব্য সফলতা পাওয়ার ক্ষেত্র অবশ্যই সীমাবদ্ধ হবে। মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ৪০টির বেশি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সুন্নি মুসলিম। মিসর, জর্দান ও সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি সুন্নি মুসলমান। আর বৈশ্বিকভাবে ৮৫ শতাংশের বেশি মুসলিম সুন্নি।

জো বাইডেনের নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা, ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যতটা যা করছে বা করার জন্য প্রস্তুত আছে, তা কখনো ইসরায়েলি নেতৃত্বের কাছে যথেষ্ট মনে হবে না। এর আগে ডেমোক্র্যাট দুই প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও বারাক ওবামা ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করেছেন, কিন্তু তাঁদের উদ্যোগ কখনো প্রশংসিত হয়নি।

মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের স্থায়ী সম্পর্কের সূচনা হয় জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায়। অন্যদিকে ওমাবা সামরিক সহায়তাসংক্রান্ত এমন একটি বিলে সই করেন, যাকে বলা যায় উপুড়হস্ত সহায়তার বিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে এমনটা আর ঘটেনি। কিন্তু এরপরও ইসরায়েলি মিডিয়ায় সেটিকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ অভিহিত করে।

চার বছরের মধ্যে পঞ্চম নির্বাচনের মুখে ইসরায়েল, একটা সরকারও স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে বাইডেনের সফর ছিল মোটাদাগে প্রতীকী ও সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতিও তুলে ধরেনি।

ইরানের পরমাণু চুক্তিতে শরিক না হয়েই বাইডেন প্রশাসন অঞ্চলটিতে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি কমাতে চাইছে। অথচ এ ক্ষেত্রে চুক্তিটি হতে পারে ‘গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক’। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানিসংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সৌদি আরব ও অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজভুক্ত (ওপেক) অন্যান্য দেশের তেলের ওপর ওয়াশিংটনকে নির্ভরতা বাড়াতে হয়েছে।

ইরানকে পরমাণু অস্ত্র থেকে দূরে রাখতে সম্ভাব্য সামরিক সমাধানের ব্যাপারে বাইডেনের আগ্রহ, এমনকি ‘শেষ উপায়’ হিসেবে এমন পদক্ষেপের কথা বলাটা ছিল অপ্রয়োজনীয়ভাবে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের চাওয়াকে তুষ্ট করা।

সব মিলিয়ে বলা চলে, মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের সফরের মধ্য দিয়ে অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল প্রভাবের দিকটি ফুটে উঠেছে। তাঁর এ সফর ইরানের পরমাণু চুক্তিতে ফেরার বিষয়টি আরও জটিল করে তুলল এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রশ্নে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের ভূমিকা রাখার সক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিল।

অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতার পরিমাপ কেবল দেশটির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব কতটুকু, তার ওপর নির্ভরশীল—এ সফর সে ধারণাকেই জোরালো করেছে। সুনির্দিষ্টভাবে বাইডেনের ইসরায়েল সফর ছিল অর্থহীন। ওই সফরকালে তিনি দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কার্যত ফিলিস্তিনিদের প্রতি কোনো মনোযোগ তিনি দেননি।

ফলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের সেই ‘কাঁটাঝোপেই’ আটকে রইল। ইরানের বিপ্লব ও ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন অঞ্চলটিতে তাদের প্রভাবের মূল্যায়ন করতে সামরিক শক্তির ওপর ভরসা রেখে আসছে।

অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দেশটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একপক্ষীয় সমর্থন ও ইরাকে আগ্রাসন চালানোর মধ্য দিয়ে সম্পর্কের যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সেই ক্ষতির কাছে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের যেকোনো আলোচনা, এমনকি ‘শেষ উপায়’ হিসেবেও এ ধরনের আলোচনা অবশ্য তেমন কিছু নয়।

জো বাইডেনের এ সফরের পর যদি তেল উৎপাদনে গতি বাড়ে, তবে সৌদি আরব ও দেশটির যুবরাজকে ‘একঘরে করে রাখার নীতি’ থেকে সরে আসার পক্ষে একটা জুতসই যুক্তি পেয়ে যাবেন তিনি। এ জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।
অনুবাদ: হাসান ইমাম