মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

সরে দাঁড়ালেন বাইডেন

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সরকারের নির্দেশে দেশের ভেতরে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে প্রথম আলো ডটকমে কোনো সংবাদ বা লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। যদিও এ কয়েক দিনে নানা ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত–সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৯৭ জন। সংকট নিরসনে সরকারও একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সময়ে ছাপা পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংবাদ ও লেখাগুলো অনলাইনে প্রকাশ করা হলো। এই সংবাদটি সোমবার (২২ জুলাই) প্রকাশিত হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না জো বাইডেন। গতকাল রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে নতুন প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়েছেন বাইডেন। এখন দলীয় সিদ্ধান্ত একই হলে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে লড়বেন কমলা হ্যারিস।

এক্সে জো বাইডেন লিখেছেন, ‘আমার সরে দাঁড়ানোটা আমার দল, আমার দেশ ও আমার নিজের জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটা তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় সম্মানের বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 

আমার সরে দাঁড়ানোটা আমার দল, আমার দেশ ও আমার নিজের জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক।
জো বাইডেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

৮১ বছর বয়সী বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। এই বয়স নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি কতটা ভালো করতে পারবেন, সে প্রশ্ন ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ছিল। তা সত্ত্বেও দলের ডেলিগেটরা (প্রতিনিধি) তাঁকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। সে অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারও শুরু করেছিলেন বাইডেন। তবে বাদ সাধে গত মাসের শেষের দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রথম সরাসরি নির্বাচনী বিতর্ক।

ওই বিতর্কে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের সামনে ধরাশায়ী হন বাইডেন। এরপর তাঁর সক্ষমতা নিয়ে জোরেশোরে প্রশ্ন উঠতে থাকে। ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক নেতা তাঁকে প্রকাশ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এ তালিকায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ডেমোক্রেটিক পার্টির ২৬৪ জন সদস্যের মধ্যে ২০ জন। বাইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে গোপনেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন অনেকে। আর বাইডেন সরে না দাঁড়ালে ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনী তহবিলে অর্থ না দেওয়ার ঘোষণা দেন অনেক চাঁদাদাতা। তাঁদের মধ্যে প্রভাবশালী ডিজনি পরিবারও রয়েছে।

তবে এত কিছুর পরও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অনড় ছিলেন বাইডেন। তিনি বারবার দাবি করেন, পুরোপুরি সুস্থ ও সক্ষম আছেন। তবে তাঁর মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবের বড় ফারাক ছিল। চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটনে। সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নাম নিয়ে গড়বড় করে ফেলেন তিনি। ফলে বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এরই মধ্যে গত সপ্তাহে লাস ভেগাসে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বাইডেনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর সব প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে ডেলাওয়ারে নিজ বাসভবনে আইসোলেশনে (সঙ্গনিরোধ) যান তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছিল, বাইডেনের উপসর্গ মৃদু। সেখান থেকেই গতকাল প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বাইডেন যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন—সম্প্রতি এমন আভাস দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এ। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতে পারে, এমন ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট মেনে নিতে শুরু করেছেন। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশীল সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন গত শনিবার বাইডেনের প্রতি সমর্থনে অবিচল থাকার কথা জানানোর পাশাপাশি তিনি সরে গেলে কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বাইডেন আমাদের মনোনীত প্রার্থী। তাঁর সামনে এখন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা।’ 

কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে কয়েক দিন আগেই জানিয়েছিলেন তাঁর সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা অ্যাশলে এটাইনে। তিনি বলেছিলেন, ‘বাইডেনের ওপর আস্থা বাড়াতে কাজ করছেন কমলা। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাসও জাগানোর চেষ্টা করছেন যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে তিনি প্রস্তুত।’

তবে কমলাকে নিয়েও নাকি দলের ভেতরে অনেকের অসন্তোষ রয়েছে। যেমন প্রতিনিধি পরিষদে নিউইয়র্কের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া অস্কারিও-কর্তেজ। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টিতে অর্থদাতা ও মার্কিন অভিজাতদের বড় একটি অংশ যেমন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বাইডেনকে চায় না, তেমনই কমলার প্রতিও তাদের আগ্রহ নেই।

এদিকে বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার আগে গত শনিবার মিশিগানে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে লক্ষ্য করে উপহাস করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে বাইডেনকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়েই কোনো ধারণা নেই তাঁদের। একজনকে তাঁরা দাঁড় করালেন ভোট পাওয়ার জন্য, কিন্তু এখন তাঁকে তাঁরা সরিয়ে নিতে চান।’