আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের পুলিশি হেফাজতে আসতে হচ্ছে। স্থানীয় ফৌজদারি আদালতে যখন তিনি হাজিরা দিতে আসবেন, তখন তাঁকে কয়েক ঘণ্টা কারাগারে কাটাতে হবে। তবে তাঁর সঙ্গী অন্য আসামিদের ভাগ্য এতটা সুপ্রসন্ন না-ও হতে পারে।
জর্জিয়া কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, আদালতে হাজির হওয়ার আগে ট্রাম্প ও তাঁর সঙ্গী অন্য ১৮ আসামিকে আটলান্টার ফুলটন কাউন্টি কারাগারে কাটাতে হতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ‘পরিস্থিতির’ পরিবর্তনও হতে পারে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় ২৫ আগস্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
স্থানীয় শেরিফ প্যাট লাবাত বলেছেন, ট্রাম্পের মামলার প্রক্রিয়ার সময় কর্মকর্তারা ‘প্রথাগত রীতি’ অনুসরণ করবেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলার শুনানির অপেক্ষায় ট্রাম্পকে কাউন্টির ওই কুখ্যাত কারাগারে সপ্তাহ, মাস, এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত কাটাতে হতে পারে। ফুলটন কাউন্টির এ কারাগার বেশ অনিরাপদ।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো আসামি গ্রেপ্তার হলে জামিন না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য তাঁদের কারাগারে থাকতে হয়। অথবা তাঁদের স্বল্প মেয়াদের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে রাখা হয়, এমন নজিরও আছে। আর দণ্ডিত হলে অপরাধীকে কারাগারে দীর্ঘতর সময় থাকতে হয়।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের (এসিএলইউ) ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফুলটন কারাগারে শত শত আসামি ৯০ দিনের বেশি সময় বন্দী ছিলেন। কারণ, তখনো তাঁদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি বা তাঁরা নিজেদের জামিনের জন্য মুচলেকা হিসেবে পর্যাপ্ত অর্থ পরিশোধ করতে পারেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কারাগারে ১১৭ আসামিকে পাওয়া গেছে, যাঁরা এক বছরের বেশি সময় ওই কারাগারে বন্দী ছিলেন। অথচ তাঁরা তখনো আদালতে অভিযুক্ত হননি। এ ছাড়া ১২ আসামি ছিলেন, যাঁরা দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী।
এসিএলইউর জর্জিয়া রাজ্যের কর্মকর্তা ফ্যালন ম্যাকক্লুর বলেন, নির্মাণের পর থেকে ফুলটন কারাগারে উপচে পড়া আসামি রাখা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এ কারাগারে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
জর্জিয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কীভাবে অভিযোগ আনা হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানাননি সরকারি কৌঁসুলিরা। তবে ইতিপূর্বে নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা ও ওয়াশিংটন ডিসিতে তাঁর বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে প্রক্রিয়ায় কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অবশ্য ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই তিন রাজ্যের আদালতে ট্রাম্প উপস্থিত হওয়ার পর অন্যান্য আসামির মতো তাঁর মৌলিক তথ্য ও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধীর থেকে তাঁকে আলাদা নিরিবিলি অবস্থায় রাখা হয়েছে। আদালতে দ্রুত তাঁর কাজ শেষ করা হয়েছে। এসব আদালতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও মার্কিন মার্শাল সদস্যরা তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন।
অন্যান্য আসামির ন্যায় ট্রাম্পের ছবি তোলা হয়নি বা তাঁকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তাঁর ছবি তোলার দরকার নেই। কারণ, তাঁর প্রচুর ছবি রয়েছে। তাঁর পালিয়ে যাওয়ারও কোনো ঝুঁকি নেই।
এই তিন রাজ্যের আদালতে শুনানি শেষে মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে ট্রাম্প আদালত ত্যাগ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই তিন আদালতের কিছু দৃশ্য ফুলটন কাউন্টিতেও দেখা যেতে পারে।
ফুলটন কাউন্টিতে দীর্ঘ সময় ধরে কর্মরত আইনজীবী, যাঁরা ট্রাম্পের হয়ে কাজ করছেন, তাঁরা বলছেন, ‘ট্রাম্প সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সুতরাং তাঁর সঙ্গে এখানে সেভাবে আচরণ করা হবে। আমাদের মক্কেলরা সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে যাবেন।’