যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের অদূরে শুরু হওয়া দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। দাবানলে পুড়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এ পরিস্থিতিতে সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। যেসব বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে পারেননি, তাঁদের অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। দাবানল ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের হিসাবে, বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত দাবানলে অন্তত দুজন মারা গেছেন। গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন অনেকে। দাবানলে এক হাজারের বেশি বাড়িঘর পুড়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, আতঙ্কিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। বাড়িঘর, গাছপালাসহ চারপাশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। সড়কে পড়ে থাকা গাড়িগুলো সরিয়ে নিতে উদ্ধারকর্মীদের বুলডোজার ব্যবহার করতে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র সময় মঙ্গলবার সকালে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেসের অদূরে একাধিক স্থান থেকে শুরু হয় ভয়াবহ এই দাবানল। এরপর তা দ্রুত অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেন। দাবানল সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের অদূরের প্যাসিফিক পালিসাদেস ও উত্তর দিকের আলতাদেনা এলাকায়।
দাবানলে প্যাসিফিক পালিসাদেসের বাসিন্দা অ্যান্ড্রু হায়ার্সের বাড়ি পুড়ে গেছে। স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। অ্যান্ড্রু হায়ার্স এএফপিকে জানান, দাবানলের সতর্কবার্তা পেয়েই তিনি বাড়ি ছেড়ে পালান। তিনি বলেন, ‘দাবানল দেখে আমরা দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠি। এরপর দ্রুত বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।’
লস অ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের প্রধান অ্যান্থনি মেরন গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দাবানলে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। আনুমানিক এক হাজারের বেশি বাড়ি পুড়ে গেছে। ঝোড়ো বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত কত শতাংশ এলাকার আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’
অ্যান্থনি মেরন আরও বলেন, আগুনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। বিশেষত দাবানল শুরুর পরও যাঁরা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেননি, তাঁদের মধ্যে এই সংখ্যাটা বেশি।
দাবানল ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনর্বাপণ ও জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, দাবানল এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে যতটুকু নেভানো সম্ভব হচ্ছে, একই সময়ে তার চেয়ে অনেক বড় এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস–এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দাবানল ঠেকানোর কাজে নিয়োজিত অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি সেবা কর্মীদের অনেকেই পানির সংকটে পড়ছেন।
দাবানলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন অ্যামি পুরস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা জেমস উডস। ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁর বাড়ির অদূরে পৌঁছে গেছে দাবানল। উডস লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমাদের প্রিয় ছোট্ট বাড়িটির এমন পরিণতি হবে। এটা দেখে প্রিয়জন হারানোর মতো কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইতিমধ্যে দাবানল-সম্পর্কিত তথ্য জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার জন্য বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।