আর মাত্র দুই মাসের কিছুটা বেশি সময় বাকি। এর পরই আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে লড়াইয়ের মাঠে নামবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলো।
এমনই একটি অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া। সেখানে ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। এই ১৬টি ভোট কে পাবেন, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে অঙ্গরাজ্যটির রেবান এলাকা। নির্বাচনে যে প্রার্থী ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি পাবেন, তিনিই বসবেন হোয়াইস হাউসে প্রেসিডেন্টের গদিতে।
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে রেবান কাউন্টির বাসিন্দাদের আলোচনায় নানা বিষয় স্থান করে নিয়েছে। অর্থনীতি, গর্ভপাত ও অভিবাসন এর মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক নির্বাচনের আগে কী ভাবছেন রেবানের ভোটাররা—
৬৪ বছর বয়সী প্যাট্রিসিয়া প্যাট পস একসময় কাজ করতেন আবাসন খাতে। এখন তিনি অবসরে রয়েছেন। জর্জিয়ার রেবান কাউন্টির নিজ বাড়ির বাগানে বসে এএফপির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পস বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি একটি জিনিসই চান, সেটি হচ্ছে স্বাধীনতা।
পস বড় হয়েছেন অ্যাপালাচান পর্বতমালা এলাকার একটি গ্রামে। এর অবস্থান জর্জিয়ার উত্তর–পূর্ব অঞ্চলে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে এটা নয় যে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্তই কেবল কর দিয়ে যাব, আর বেঁচে থাকা ও পরিবারের জন্য অর্থ খরচ করে যাব।’
রেবান এলাকার আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে এএফপি। এই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকেই তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া গুরুত্বের তালিকায় রয়েছে গর্ভপাত, অভিবাসন ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মতো বিষয়গুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেসব অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি দোদুল্যমান, সেগুলোর একটি জর্জিয়া। এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—দুই দলেরই জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে পস বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি ভালো অনেক কিছু করেছেন।’
রেবান এলাকাটির অবস্থান ‘বাইবেল বেল্টের’ একেবারে কেন্দ্রে। এখানে রক্ষণশীল খ্রিষ্টান মানুষের সংখ্যা বেশি। পস বলেন, ‘খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল হওয়ার কারণে আমরা বেশির ভাগ সময় রিপাবলিকানদের ভোট দিই। তাই এবার আমরা ট্রাম্পকে ভোট দেব।’
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যেসব বড় পদক্ষেপের জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়, সেগুলোর একটি কেন্দ্রীয় গর্ভপাত আইন বাতিল। মূলত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে তিনি তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিলেন। এর ফলেই ওই আইন বাতিল করা সম্ভব হয়েছিল।
এ নিয়ে কথা বলছিলেন ব্যাপ্টিস্ট যাজক উইল গ্রিফিন। তিনি রেবানের ক্লেটন শহরের একটি চার্চে ধর্মীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই শহরের বাসিন্দা প্রায় দুই হাজার। গ্রিফিন বলেন, ‘একজন খ্রিষ্টান হিসেবে অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি, গর্ভপাত খারাপ ও ভুল কাজ।’
দুই সন্তানের এই বাবা বলেন, ‘প্রতে৵কটি জীবন সৃষ্টিকর্তার উপহার। সেই জীবনকে বিনষ্ট করা হত্যার মতো। আর সৃষ্টিকর্তা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, হত্যা একটি খারাপ কাজ।’
ট্রাম্পের নির্বাচনী ইতিহাসে জর্জিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন তিনি। যদিও ওই পরাজয় মেনে নেননি। ওই নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। জর্জিয়াতেই তাঁর ঘাড়ে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের একটি মামলা ঝুলছে। তবে আগামী ৫ নভেম্বর নির্বাচনের আগে ওই মামলার শুনানি শুরু হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় চলতি বছরে আদালতে দোষী সাব্যাস্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে সময়ে আদালত এই মামলার রায় দিয়েছেন তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন ৪৮ বছর বয়সী এলিজাবেথ অ্যাডামস।
আসন্ন নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ওপর গভীর নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন রেবনের বাসিন্দারা। ধর্মীয় আচার পালনে নিয়মিত চার্চে যাওয়া এলিজাবেথ অ্যাডামস বলেন, ‘কোনটা সত্যি আর কোনটাতে রাজনীতির গন্ধ রয়েছে, তা আমরা নজরে রাখার চেষ্টা করছি।’
নির্বাচন ঘিরে রেবনের বাসিন্দাদের আলোচনা মূলে রয়েছে অভিবাসনও। মেক্সিকো বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সোনিয়া রেন্ডন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের পক্ষে। এই নারী বলেন, ‘আমি মেক্সিকোর নাগরিকদের পছন্দ করি। আমি মনে করি (অভিবাসনের সুযোগ দিয়ে) মেক্সিকানদের সহায়তার চেষ্টা করছেন বাইডেন।’
প্রায় ৩০ বছর ধরে রিপাবলিকানদের ভোট দিয়ে এসেছেন সোনিয়া রেন্ডন। তবে বিগত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট দিয়েছিলেন তিনি। রেন্ডন বলেন, অ্যাপালাচান অঞ্চলের যেসব এলাকায় রিপাবলিকানদের আধিপত্য রয়েছে, ‘সেসব জায়গায় আমি মুখ বন্ধ রাখি আর একটু হাসি দিই।’