যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

রয়টার্সের বিশ্লেষণ

বাইডেনের সময় শেষ হচ্ছে, তখনো মধ্যপ্রাচ্যে ‘নড়বড়ে’ মার্কিন কূটনীতি

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা সত্ত্বেও প্রায় এক বছর ধরে চলা এই সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি। লোহিত সাগরে জাহাজ লক্ষ্য করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলাও চলছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পরও ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘাত গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আগামী জানুয়ারিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে একাধিক সংকটের মুখে পড়েছেন তিনি। বাইডেনের বিদায়ের আগে এসব সংকটের কোনো সমাধান আসবে না বলেই ধারণা বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের। তাঁরা বলছেন, এসব সংকট সমাধানে ব্যর্থতা নতুন প্রেসিডেন্টকেও বইতে হবে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এই সংঘাত নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। একদিকে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র; অন্যদিকে বেসামরিক প্রাণহানি কমানো ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যাতে সংঘাত ছড়িয়ে না পড়ে, সেই চেষ্টাও চালাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ চেষ্টা পুরো ব্যর্থ হয়েছে।

গত প্রায় এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কৌশল বা কূটনৈতিক তৎপরতা সংঘাত থামাতে পারেনি। লেবানন সীমান্তে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধে সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ২১ দিনের অস্ত্রবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবে ইসরায়েল সাড়া তো দেয়ইনি, বরং শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পরও দেশটিতে হামলা জোরদার করেছে।

এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় গোয়েন্দা উপপ্রধান জোনাথন পানিকফ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দিন দিন হ্রাস পেতে দেখছি।’

সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব কমে আসার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ওয়াশিংটনের কথা ইসরায়েল শুনতে চাইছে না। তাঁরা বলছেন, ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলের বড় রক্ষাকবচও এই যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের চাওয়াকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না।

বেশ কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের মতে, অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ বাইডেন প্রশাসন যেভাবে সামাল দিয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নড়বড়ে হয়ে গেছে। পশ্চিমা এক কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যা–ই হোক, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থাকবে, এটা বলা ছিল বাইডেনের সবচেয়ে বড় ভুল। এতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আর পাল্টায়নি।’

মধ্যপ্রাচ্যের একজন কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ‘প্রতিপক্ষগুলোকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে’। এখানে উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরান ও এর সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে সতর্ক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে, কিন্তু তাতে তারা নিবৃত্ত হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতির ব্যর্থতার বিষয়টি উঠে আসছে অঞ্চলটির কূটনীতিকদের কথাতেও। গতকাল বৃহস্পতিবার জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বন্ধে যে কূটনৈতিক তৎপরতা, সেটাকে ‘ব্যর্থতার এক বছর’ বলা যায়। তিনি বলেন, ইসরায়েল তো তাদের বন্ধুদেশগুলোর কথাই শুনছে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে না পারলে সংঘাত থামানো যাবে না।