চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক ওপেনএআই থেকে বরখাস্ত স্যাম এখন কী করবেন

স্যাম অল্টম্যান
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চ্যাটজিপিটি উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার আগে স্যাম অল্টম্যান বিনিয়োগকারীদের বলেছিলেন, তিনি একটি নতুন কোম্পানি চালুর পরিকল্পনা করছেন।

বহুল আলোচিত মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ গত শুক্রবার স্যামকে চাকরিচ্যুত করার কথা জানায়। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্যামের সক্ষমতা নিয়ে পর্ষদের আস্থার ঘাটতির কথা জানানো হয়।

চ্যাটজিপিটি একটি শক্তিশালী মেশিন লার্নিং মডেল। বছরখানেক আগে স্যামের হাত ধরে চ্যাটজিপিটি বাজারে ছেড়ে প্রযুক্তিজগতে বিপুল খ্যাতি পায় ওপেনএআই। আর এই জগতে রীতিমতো তারকা বনে যান স্যাম।

৩৮ বছর সয়সী স্যাম ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে চাকরিচ্যুত করার পরই ওপেনএআইয়ের প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন গ্রেগ ব্রোকম্যান। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

স্যামকে চাকরিচ্যুত করার জেরে ব্রোকম্যান ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওপেনএআই ছেড়েছেন।

স্যাম নতুন যে কোম্পানি চালুর পরিকল্পনা করছেন বলে বলা হচ্ছে, তা এখনো বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। নতুন এই কোম্পানিতে যোগ দিতে আরও অনেকে ওপেনএআই ছাড়তে পারেন।

স্যামকে চাকরিচ্যুত করার পর বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাব্য মূল্যবান প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে।

গতকাল রাতে মার্কিন প্রযুক্তি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জ এক প্রতিবেদনে জানায়, সিইও হিসেবে স্যামকে কোম্পানিতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করছে ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ।

স্যামকে চাকরিচ্যুত করার পর ওপেনএআইয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মিরা মুরাতি (৩৪)। আগে তিনি একই প্রতিষ্ঠানে প্রধান প্রযুক্তিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

স্যামের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যে। তিনি বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।

চ্যাটজিপিটি বাজারে ছেড়ে প্রযুক্তিজগতে বড় ধরনের প্রতিযোগিতার সূচনা করেন স্যাম। মেটা, মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজনের মতো টেক জায়ান্টরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে জোর মনোযোগ দেয়। তারা এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

স্যামকে চাকরিচ্যুত করার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে বিভ্রান্ত করার কথা বলা হয়। পর্ষদের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা (পর্ষদ) স্যামের ওপর আস্থা হারিয়েছে।

পর্ষদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যথাযথ পর্যালোচনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই স্যামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত (চাকরিচ্যুত) নেওয়া হয়েছে। তিনি পর্ষদের সঙ্গে খোলাখুলি বা ধারাবাহিক যোগাযোগ করছিলেন না। তিনি একটা দূরত্ব জিইয়ে রাখছিলেন, যা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তাঁর সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছিল।

স্যামকে চাকরিচ্যুত করার পর প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একটি অভ্যন্তরীণ বার্তা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার ব্র্যাড লাইটক্যাপের দেওয়া বার্তায় বলা হয়, স্যামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের যোগাযোগ বিপর্যয়ের কারণে। আর্থিক, ব্যবসায়িক, নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে তাঁকে প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।

স্যামকে চাকরিচ্যুত করে ওপেনএআই নিজেই এক গভীর সংকটে পড়ে গেছে। স্যামকে চাকরিচ্যুত করার পরপরই ওপেনএআইয়ের প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন ব্রোকম্যান।

ব্রোকম্যান এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ যা করেছে, তাতে তিনি ও স্যাম হতবাক, দুঃখিত। ঠিক কী ঘটেছে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

স্যাম অপসারণের পর প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেন তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন— ওপেনএআইয়ের গবেষণা পরিচালক জ্যাকুব প্যাচোকি, এআইয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়নকারী দলের প্রধান আলেকসান্দার মাদ্রি ও গবেষক সাইমন সাইডর। স্যামকে চাকরিচ্যুত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা পদত্যাগ করেন।

স্যামের চাকরিচ্যুতির ঘটনা প্রযুক্তিবিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। এমন গুজব ছড়ায় যে এআইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিভাজন থেকে এই সিদ্ধান্ত (স্যামের চাকরিচ্যুতি) নেওয়া হতে পারে।

কেউ কেউ স্যামের চাকরিচ্যুতিকে ‘ক্যু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একটি বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এই পদক্ষেপকে ‘ভূমিকম্প’ বলে অভিহিত করেছে।

গুগলের সাবেক সিইও এরিক স্মিড বলেছেন, তাঁর চোখে স্যাম একজন নায়ক। তিনি শূন্য থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি কোম্পানি গড়েছেন। তিনি বিশ্বকে চিরতরে বদলে দিয়েছেন। স্যাম পরবর্তীকালে কী করেন, তা দেখার অপেক্ষায় তিনি।

স্যামের চাকরিচ্যুতির ঘটনাকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে ফরাসি সরকার। দেশটির ডিজিটাল মন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারট বলেছেন, স্যাম ও তাঁর দল চাইলে তাঁদের স্বাগত জানাবে ফ্রান্স।