নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে লড়তে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটাভুটিতে (প্রাইমারি) জয় নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে ৭০ বছরের মধ্যে এই প্রথম আগের নির্বাচনের দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা।
ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে প্রাইমারিতে ১ হাজার ৯৬৮ জন দলীয় প্রতিনিধির ভোটের প্রয়োজন ছিল বাইডেনের। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারির ফলাফল আসতে শুরু করলেই প্রয়োজনীয় ভোট নিশ্চিত হয়ে যায় তাঁর।
এদিন মিসিসিপি ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য এবং নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডস ও বিদেশে অবস্থানরত ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিরাও প্রাইমারিতে অংশ নিয়েছেন। তবে এসব স্থান থেকে ফলাফল আসার আগেই মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটারের সমর্থন পেয়ে যান বাইডেন।
রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে ট্রাম্পের ১ হাজার ২১৫ জন দলীয় প্রতিনিধির ভোট প্রয়োজন ছিল। মঙ্গলবার জর্জিয়াসহ চার অঙ্গরাজ্যের ভোটে বাইডেনের কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্পও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট নিশ্চিত করেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে জর্জিয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান।
প্রাইমারিতে নিশ্চিত হওয়ার পর বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়ে এখন ৫ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বাইডেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে নামমাত্র বাধার মুখে পড়েছেন। তবে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিরঙ্কুশ সমর্থন দেওয়ায় তাঁর ব্যাপারে হতাশা জানিয়েছেন দলের উদারপন্থী কর্মীরা।
প্রাইমারিতে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর একটি বিবৃতি দেন ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেখানে তিনি ‘আমেরিকার মূল ধারণাকে’ হুমকির মুখে ফেলা ট্রাম্পের ‘অপমানজনক, প্রতিশোধমূলক প্রচারণা’ মোকাবিলার বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
বাইডেন বলেন, ‘এ দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে ভোটাররা এখন কী করবেন, সে বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কি উঠে দাঁড়াতে ও আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করতে যাচ্ছি, নাকি অন্যদের হাতে তা ভেঙে দিতে চলেছি? আমরা কি আমাদের পছন্দের অধিকার পুনরুদ্ধার ও স্বাধীনতা রক্ষা করব, নাকি চরমপন্থীদের এসব কেড়ে নিতে দেব?’
রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টিও অনেকটা পূর্বনির্ধারিত ছিল। গত সপ্তাহে ‘সুপার টুয়েসডে’তে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে তিনি ১৫ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ১৪টিতেই জেতেন। এতে তাঁর সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ান।
প্রাইমারিতে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ট্রাম্প। এতে তিনি বলেন, উদ্যাপনের সময় নেই। তার চেয়ে বাইডেনকে পরাজিত করার ওপর জোর দিন। বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে খারাপ’ প্রেসিডেন্ট বলেও আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প।
অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের জন্য আলোচিত সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা বন্ধ করতে যাচ্ছি। আমরা এমন কিছু করতে যাচ্ছি, যা আগে কেউ দেখেনি। আমরা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সর্বকালের সেরা করতে যাচ্ছি।’
আগের নির্বাচনের দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয়বার এ ধরনের দ্বৈরথ সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৫৬ সালে। ওই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যাডলাই স্টিভেনসনকে দ্বিতীয়বারের মতো হারান রিপাবলিকান প্রার্থী ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার।
২০২০ সালের নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট তিক্ততা এ বছর আবার দেখতে কম আগ্রহী ভোটাররা। রয়টার্স/ইপসোস জনমত জরিপে দেখা গেছে, বাইডেন ও ট্রাম্প অধিকাংশ ভোটারের কাছেই অজনপ্রিয়।
বিভিন্ন ফৌজদারি অভিযোগে জর্জরিত ট্রাম্প। এই প্রথম সাবেক কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২৫ মার্চ একটি ফৌজদারি মামলায় নিউইয়র্কের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তিনি।